Subscribe Us

header ads

কলেজের মাঠে


বি. এ. দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দু-সপ্তাহের ছুটি পেয়ে বাড়ি এসেছিলাম। প্রায় বছর খানেক পর মেস থেকে বাড়ি এলাম। বাড়িতে এক সপ্তাহ সময় কাটানোর পর ভালো লাগলো না। সেই পরিচিত জায়গা, বইয়ের গন্ধ, এলোমেলো ছন্ন ছাড়া মেসের ঘর, বন্ধু বান্ধব সবটাই ভীষণ মিস করতে লাগলাম। একবার ভাবলাম, না আর বাড়িতে নয় এইবার মেসে ফিরতে হবে। কিন্তু এর পরেই ভাবলাম, গিয়েও কি করবো, ওখানে তো কেউই নেই যে যার বাড়ি চলে গেছে। কথা বলার মতো কাউকে পাবো না। একা একা বসে থাকতে হবে ভূতের মতো।

এই সব কথা ভাবছি ঠিক সেই সময় সৌভিকের ফোন এলো।
“মেসে কবে আসবি?”

“আসবি মানে? তুই কি মেসেই রয়েছিস নাকি?”

“হ্যাঁ মেসেই তো।”

“বাড়ি যাসনি?”

“গিয়েছিলাম কিন্তু দুদিন থেকে পালিয়ে এসেছি। আর এসেই দেখি বিপত্তি।”

আমি হেসে বললাম, “কেউ নেই তাই তো।”

“আর বলিস না। সবাই যে যার বাড়ি চলে গেছে, আমি একা এসে ফেঁসে গেলাম। বিরক্ত লাগছিল, তাই তোকে ফোন করলাম।”

একটু থেমে সৌভিক আবার বলল, “তাহলে আসবি কবে তুই?”

যাবো ভেবে নিয়েছিলাম আগে থেকেই তবুও ইয়ার্কি করে বললাম, “না রে এখন তো যাবো না আমি, মাস খানেক বাড়িতেই থাকবো ভাবছি।”

আমার কথা শুনে সৌভিক খানিকটা দমে গেল। বলল, “আসবি না। তবে আর কি, ভাবছি আজ বিকেলের ট্রেন ধরেই বাড়ি ফিরে যাবো।”

আমি আবারও সেই আগের মতোই হেসে বললাম, “আরে ধুর, আমি আজ বিকেলের ট্রেন ধরেই মেসে যাচ্ছি। তোকে আর বাড়ি যেতে হবে না।”

সৌভিক তারস্বরে চেঁচিয়ে বলল, “সত্যি আসবি? আয় আয় চলে আয়, সন্ধ্যার দিকে তবে দুজনে একসঙ্গে কলেজ মাঠে ঘুরতে যাবো।”


শীতকালের সন্ধ্যে। সয়টার টা গায়ে চাপিয়ে নিয়ে দুই মিনিটের পথ হেঁটে আমি আর সৌভিক কলেজ মাঠের সামনে এসে পৌঁছলাম। 

আগের দিন বৃষ্টি হয়েছিল। যার ছাপ হেঁটে আসা পিচের রাস্তার উপর না থাকলেও মাঠের মধ্যে যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা ছোটো বড়ো নিচু জায়গা গুলোতে বেশ সুস্পষ্ট ছিল। মাঠের মধ্যে ঢুকে সেই সব জল কাদা এড়িয়ে শুকনো জায়গা দেখে পা ফেলে চলতে হচ্ছে। 

আমি সোজাসুজি মাঠের মাঝখানের দিকে হাঁটা লাগিয়েছি দেখে সৌভিক বলল, “মাঝখান দিয়ে না গিয়ে মাঠটা কে গোল করে ঘুরে আসবো চল।”

“আচ্ছা তাই চল।” বলে মাঠের এক প্রান্তে এসে হাঁটা শুরু করলাম।


এক মনোরম শীতের সন্ধ্যে। মেঘ মুক্ত নক্ষত্র খচিত আকাশের নিচে খোলা মাঠের উপর আমি আর সৌভিক পাশাপাশি হাঁটছি। হাঁটতে হাঁটতে নানান কথা বার্তা হচ্ছে আমাদের মধ্যে। এই যেমন মাঠ থেকে বেরিয়ে ফুচকার  দোকানে গিয়ে ফুচকা খাবো, চায়ের দোকানে চা খাবো আর তারপর রাতের খাওয়ারের জন্য রুটি কিনে নিয়ে মেসে ফিরবো। 

এই সব কথা বলার ফাঁকে মাঝে মধ্যেই সামনের দিকে তাকানো ছাড়াও ডাইনে ও বামে ফিরে ফিরে দেখছিলাম। সমস্ত দৃশ্য অনুধাবন করার পর যখন সামনে নিচের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলছি তখন দেখি সৌভিক আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। 

হাসতে হাসতে বলল, “কি রে?”

চারদিকে একই দৃশ্য দেখে দেখে ভীষণ বিরক্ত হয়ে বললাম, “কি রে মানে? তুই জেনে বুঝে এই সব দেখানোর জন্য আমাকে নিয়ে এসেছিস তাই না।”

“আরে না তুই ভুল ভাবছিস আমাকে।”

আমি সৌভিকের কথা আটকে দিয়ে বললাম, “সব বুঝতে পারছি এবার। তুই আমার এই সিঙ্গেল মনে কষ্ট দেওয়ার জন্যই এখানে নিয়ে এসেছিস।”

“আরে ধুর তেরিগী আমি তোকে কেন কষ্ট দিতে যাবো। ওই দিক দিয়ে ভাবলে আমিও তো সিঙ্গেল।”

“হ্যাঁ এখন তো বলবি।”

“সত্যি বলছি ভাই বিশ্বাস কর। আসলে তোর সঙ্গে কোনোদিনও কলেজ মাঠে আসিনি তো, সেই জন্যই...।”

“থাক আর অজুহাত দিতে হবে না। মাঠ পরিক্রমন শেষ হয়ে এসেছে তাড়াতাড়ি চল।”

সৌভিক কে নিজের ইচ্ছে মতো ভাষণ শোনাতে শোনাতে চলেছি ঠিক সেই সময়ে দেখি সামনে একটা মেয়ে আমাদের দিকেই হেঁটে আসছে। তার চোখের দিকে ভালো করে তাকিয়ে বুঝলাম সে আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থেকেই আমি সৌভিক কে নিচু গলায় বললাম, “ওভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে আসছে প্রপোজ-টপোজ করবে নাকি রে আবার।”

সৌভিকও আমার মতো নিচু গলায় বলল, “হ্যাঁ যদি প্রপোজ করে তবে তোকেই করবে। কারণ নজরটা তোর দিকেই এখন পড়েছে।”

ভালো করে দেখে বুঝলাম সৌভিকের কথাই ঠিক। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়েই সামনে এগিয়ে আসছে। আমি অনুভব করলাম যতই মেয়েটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে ততোই আমার হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে। একসময় দেখি মেয়েটার ঠোঁটটা হঠাৎ নড়ে উঠলো। মুখ থেকে মিষ্টি গলায় বেরিয়ে এলো, “Hii”

মেয়েটার মুখে hii শুনে আমি থতমত খেয়ে গেছি দেখে সৌভিক চাপা স্বরে বলল, “আরে মেয়েটা তোকে hii বলছে, তুই কিছু বল।”

“আমি, আমি হ্যাঁ।” ডান হাত উপরে তুলে জবাব দিলাম, “hii”

আমার কথা শুনে মেয়েটা কেমন একটা অদ্ভুত ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকালো। তারপর সেই আগের মতোই মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠে বলল, “কোথায় ছিলে এতক্ষন তুমি?”

আমি আটকে আটকে বললাম, “এই, বন্ধুর সঙ্গে একটু ঘুরতে এসেছিলাম আর কি।”

কথাটা বলা যখন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে ঠিক সেই সময়ে দেখি মেয়েটা আমার ডান দিক দিয়ে পেছনে বেরিয়ে গেল। আমিও সেই সঙ্গে পেছন ফিরে তাকালাম। দেখলাম মেয়েটার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা ছেলে। ছেলেটা মেয়েটার শেষ প্রশ্নের উত্তরে বলছে, “Sorry dear একটু দেরি হয়ে গেল।”

ততক্ষণে আমার সমস্ত ব্যাপারটা বোঝা হয়ে গেছে। সামনে তাকিয়ে দেখি সৌভিক দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। ভীষণ লজ্জা ও সৌভিকের প্রতি ভীষণ রাগ নিয়ে আমিও দৌড় দিলাম।

মেসে ফিরে সৌভিকের  হাসির ফোয়ারা ছুটল। থামল সেই পৌনে এগারোটার সময়।”