Subscribe Us

header ads

বৃষ্টি ভেজা আরোহী

পরিক্ষা শেষ হয়েছে, তাই আর পড়াশোনার চাপ টা নেইমেসের এক দাদার মুখে শুনলাম বাস স্ট্যান্ডের কাছেই মেইন রোড থেকে একটু ভেতরের দিকে নাকি একটা মেলা বসেছেকলেজ থেকে ফেরবার সময় লোকজনের ভিড় আর মাইকের আওয়াজ শুনে মনে হয়েছিল কিছু একটা হচ্ছেএখন দাদার কাছে খবরটা শুনে ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম

Image Collected from Internet

আমি আর তন্ময় মেসের একটা ঘর দখল করে রয়েছিতন্ময়, খাটের উপরে রাখা বালিশটার উপর কনুই  ঠেকিয়ে গালে হাত দিয়ে কিছু একটা লিখছিলখাটের উপর বসে নিচের দিকে ঝোলানো পা দুটোকে দোলাতে দোলাতে আমি বললাম,“দাদার কাছে শুনলাম বাস স্ট্যান্ডের কাছে নাকি মেলা বসেছে তো,যাবে নাকি মেলা দেখতে।”

তন্ময় আমার কথা শুনে লিখা বন্ধ করে পেনটাকে খাতার উপর রাখলো, তারপর আমার দিকে না তাকিয়েই আগুল মটকাতে মটকাতে বললো, “হ্যাঁ গেলেই হলো।”

আমি হেসে বললাম,তবে আর মুখটাকে ওই বই-খাতার মধ্যে গুঁজে না রেখে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।

হ্যাঁ নিশ্চই।বলে তন্ময় খাট থেকে নিচে নামলো তারপর বালিশটাকে যথা স্থানে রেখে বই-খাতা গুলোকে খাট থেকে সরিয়ে নিয়ে ঘরের এক কোণে রাখা একটা টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখতে লাগলো।

আমার বইপত্র গুলো আগে থেকেই গোছানো ছিল। কেননা আজকে সন্ধায় তন্ময়ের কাছে যে মেলা যাওয়ার প্রসঙ্গ টা তুলবো, সেটা আমি কলেজ থেকে ফেরবার পথেই ভেবে নিয়েছিলাম। আর তন্ময়কে মেলাতে যাওয়ার কথা বললে ও যে এক কথায় রাজি হবে, সে বিষয়ে আমি একশো শতাংশ নিশ্চিত ছিলামতাই সব কিছু গুছিয়ে রেখে আগে থাকতে কাজ কমিয়ে রেখেছিলাম।

প্যান্টটা আগে থেকেই পরা ছিল। জামাটা পরতে পরতে আমি তন্ময়কে বললাম, “ছাতাটা সঙ্গে নিয়ে যাবে তো নাকি। কাল সন্ধ্যার দিকে কিন্তু টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছিলো

তন্ময় মুখে একটা অস্বাভাবিক শব্দ করে খুব কনফিডেন্সের সঙ্গে বললো, “আরে কাল বৃষ্টি হয়েছে, আজ আর হবে না। মিছিমিছি সঙ্গে করে একটা ছাতা নিয়ে যাওয়ার কি দরকার। তাছাড়া আমার অনেক কিছু কেনার আছে। এক্সট্রা একটা ছাতা নিয়ে গিয়ে বয়ে নিয়ে আসতে পারবো না

আর যদি আজও গতকালের মতো বৃষ্টি হয়।

বললাম তো হবে না। আর হলেও সে পরে দেখা যাবে ক্ষণ

আচ্ছা ঠিক আছে, চলো পরে বলো না, যে আমি ছাতা নিয়ে যেতে বলিনি

আমি জানতাম বাড়িতে থাকলে ওর মা নিশ্চই ছাতা না নিয়ে গেলে ওকে বেরোতেই দিতো না আসলে মেসে এসেছে তো, সেই কারণে স্বাধীনতার ভরপুর ফায়দা উঠাচ্ছে

আমি বেরানোর জন্য তৈরি হয়েই ছিলাম। তন্ময় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতেই খাটের উপর রাখা মোবাইলটা পকেটে ভরে নিয়ে যেই বেরাবো, দেখি দরজার সামনে বান্টি-দা দাঁড়িয়ে রয়েছে আমাদের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছেএকটু পর হাসিটা থামিয়ে নিয়ে বললো,“কি, কোথায় যাওয়া হবে?

আমার বলার আগে তন্ময় বললো, “মেলা দেখতে যাবো বেরিয়েছি বান্টি-দা। তুমি যাবে নাকি?”

না রে আমি একটু আগেই ঘুরে এলাম। তোরা যাবলে দরজা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। আমরা দুজন বাইরে বেরিয়ে আসতে বান্টি-দা বললো, “দরজায় তালা দিয়ে যাবি।

হ্যাঁ বান্টি-দা”, কথাটা বলতে বান্টি-দা তার রুমের দিকে যেতে শুরু করলো তারপর একটু দূরে নিজের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে বললো,আর বাইরের গেটটাও মনে করে লাগিয়ে দিয়ে যাবি।

আচ্ছা বান্টি-দা।

আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি, অযত্নে সাজানো তারাগুলোর মাঝে সরু উজ্জ্বল একফালি ধবধবে সাদা চাঁদটাকে কেউ যেন ধারালো পিন দিয়ে আকাশের গায়ে সেঁটে দিয়েছেমেস থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তার উপর দাঁড়িয়েছিলাম। তন্ময় বাইরের গেটের শিকালটা তুলে দিয়ে আমায় বললো,“চলো এবার।

গন্তব্যস্থল মাত্র এক মাইল তাই আর সাইকেলটা সঙ্গে নিই নি। পায়ে হেঁটেই যাচ্ছি পায়ে হেঁটে যাওয়ার অবশ্য আরও একটা কারণ রয়েছে সন্ধ্যার পর শহরের ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটাই অন্যরকম যারা কোনো এক সন্ধ্যায় মুক্ত মনে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে গিয়েছে তারা জেনে থাকবে এর মন্ মুগ্ধতা সুয্যি মামা ঢলতে না ঢলতেই রূপ নগরী তার রূপ সজ্জায় ত্রস্ত হয়ে ওঠে রঙিন রূপ সজ্জিত নগরীর প্রতিটা ফুটপাত তখন হঠাৎ করেই পথযাত্রীকে চুপি চুপি করে জানিয়ে দেয় - তুমি এক রঙিন স্বপ্নের দুনিয়ায় এসে পড়েছো

আমরা ফুটপাত ছেড়ে একটা গলির মধ্যে প্রবেশ করি আর তার সঙ্গে সঙ্গেই যেন মনে হলো সেই স্বপ্নের দুনিয়াটা বুঝি একটু ঝাপসা হয়ে গেল এখানটায় আলো একটু কম। গলিটা সাধারণ গলি গুলোর চেয়ে একটু চওড়া এদিক দিয়ে গেলে একটু শর্টকাট হবে এই ভেবেই যাওয়া এই রাস্তা দিয়ে মেলার দিকে তেমন কাউকে একটা যেতে দেখলাম না। কিন্তু, ফিরে আসতে বেশ কয়েক জনকে দেখলাম। কি জানি হয়তো অন্য রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে কিংবা আমরা যখন যাচ্ছি তখন কাউকে যেতে দেখছি না একটু আগে হয়তো কেউ গিয়েছে বা একটু পরে কেউ যাবে

এতক্ষন আকাশের দিকে একবারও তাকানো হয়নি। হঠাৎ একটা সরু আঁকা বাঁকা উজ্জ্বল রেখা আকাশের এক কোণ থেকে অন্য কোণ অব্দি নিঃশব্দে ঝিলিক মেরে উঠতে দেখে, আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকালাম দেখি কালো ক্যানভাসে আঁকা একফালি চাঁদ আর জ্বলজ্বলে তারাগুলো হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়েছে। যেন কেউ চাঁদ তারা আঁকা পেইন্টের উপর কালো রং বুলিয়ে দিয়ে গেছে। বুঝলাম আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে তন্ময়ও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আকাশের দিকে তাকালো তারপর চোখ নামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে যখন দেখলো আমি ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছি, তখন সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখটাকে আমার দিক থেকে সরিয়ে নিল আমি মনে মনে একটু হাসলাম জানি, এখন যদি আমি ওকে জোর গালিগালাজও করি, চুপচাপ শুনে নেবে। মনের মধ্যে জেগে ওঠা হাসিটাকে থামিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক স্বরেই বললাম,“একটু পরেই তো বৃষ্টি আসবে বলে মনে হচ্ছে মেলাতে যাবে নাকি মেসে ফিরবে?”

তন্ময় কিছুক্ষন চুপ থেকে মাথা কামড়াতে কামড়াতে কি যেন ভাবলো। তারপর বললো,“অর্ধেকের বেশি রাস্তাই তো চলে এলাম, চলো মেলাতেই যাই।

জানি তন্ময় এটাই বলবে। অগত্যা আমায় বলতে হলো, “চলো তবে

কথাটা বলা শেষ করে যখন দু-পা এগিয়েছি তখনই একঝলক বিদ্যুতের চমক আর কান ফাটানো শব্দে চারদিকটা যেন কেঁপে উঠলো  এমন বজ্র নিনাদ বুঝি জন্মেও শুনিনি। তারপর হঠাৎ করেই দেখি, আমাদের চমকে দিয়ে এক ঝাঁক বৃষ্টি প্রথমে মাথা ও পরে সারা সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে দিতে শুরু করেছে কোথায় গিয়ে দাঁড়ালে বৃষ্টির হাত থেকে রেহাই পাবো, এই ভেবে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি, দেখি একজন লোক দৌড়ে এসে সামনের একটা বাড়ির দেওয়ালের সঙ্গে সেঁটে গেল বুঝলাম ওখানে গিয়ে দাঁড়ালে নিশ্চই ছাতার কিছুটা হলেও বিকল্প পাওয়া যাবে দৌড়ে গিয়ে আমরা দুজনও দেওয়ালের সঙ্গে পিঠটাকে মিশিয়ে দিলাম




(অসমাপ্ত)