Image Collected from Internet |
তখন সবে মাত্র প্রথম বর্ষ। এম. এ. বাংলা নিয়ে বর্ধমান ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছি। হোস্টেলে থাকবো বলে অনলাইনে অ্যাপ্লাই করেছিলাম কিন্তু এত ছেলের মধ্যে জায়গা পায়নি, তাই একটা মেস বাড়িতে এসে উঠেছি।
বাড়িটা অনেক পুরোনো দিনের, বোধহয় একশো বছর মতো পুরোনো হবে। দরজা, জানালা ও আরও অন্যত্র চোখে পড়বার মতো নকশার কারুকার্য দেখলেই তা বোঝা যায়। চোটে যাওয়া পুরোনো রঙের উপর নতুনের প্রলেপ পড়ায় আদ্যিকালের শৌখিনতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে বটে কিন্তু সেই পুরোনো আদি থমথমে ভাবটা আজও থেকে গেছে। ভেতরে ঢুকলে মনে হয় যেন একশ বছর আগের কোনো সময়ে পৌঁছে গিয়েছি।
বাড়িটা কোনো বড়ো ধর্মশালা বা হাভেলির মতো এত বড়ো নয় আবার কম কিছুও নয়। দোতলা বাড়ি, উপর নিচে মিলিয়ে মোট ১৬টা ঘর রয়েছে। তার মধ্যে ১২টা ঘরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা থাকে। বাকি চারটে ঘর ব্যবহার করেন বাড়ির মালকিনের পরিবার। মালকিনের বয়স প্রায় আশির কাছাকাছি। আমরা ওনাকে সবাই ঠাম্মি বলেই ডাকি। ওনার স্বামী মারা গেছেন আজ পাঁচ বছর হলো। এই বাড়িতে উনি ছাড়া ওনার বড় ছেলে, ছেলের বউ আর দশ এগারো বছরের ভোঁতকা নাদুস নুদুস নাতি থাকে। উপরের দক্ষিণ ও পশ্চিমের দুটি করে মোট চারটি ঘর ওনাদের দ্বারা ব্যাবহৃত হয়।
আমি যে ঘরটা নিয়ে রয়েছি সেটা পুবে, দক্ষিণ দিক ঘেঁষে। দেওয়াল গুলো বেশ প্রশস্ত প্রায় দেড় হাত মতো হবে। মোটা পুরু দেওয়ালের মাঝে এই টুকুনি একটা দরজা বসানো, যেন কেউ হাতির কাছে শুকর কে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। পুব দিকে ছোটো একটা জানালা রয়েছে যা দিয়ে সকালে সূর্যের আলো ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে তাই ইলেকট্রিক আলো জ্বালাতে হয় না। কিন্তু বিকেল হলে আলোর অভাবে ঘরটা আবছা অন্ধকারে আবৃত হয়, তখন আলো জ্বালানোর প্রয়োজন পড়ে।
ঘরটা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও গোছানো। আমি জানি প্রথম প্রথম তো তাই ঘরটা একটু গোছানো থাকবে কিন্তু কয়েকদিন কাটলে উধোর ঘাড়ে বুধো চাপবে। মানে নতুন কেউ এই ঘর দেখলে ভিরমি খাবে। অবশ্য মেয়েদের মেস গুলো ছেলেদের মেসের মতো এতটা অগোছালো হয় না। হা হা, আরে না না আমি কোনো মেয়েদের মেসে গিয়ে দেখে আসিনি, আসলে আমার একখানি দুষ্টু মিষ্টি প্রেমিকা রয়েছে ওই তার মেসের কিছু ছবি দেখিয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।
মেসে অসবার পর প্রায় দেড় মাস পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে মেসের প্রায় সবার সঙ্গেই সম্পর্ক বেশ গাঢ় হয়েছে। মেসের মধ্যে অভিদা মানে অভিরূপ দা ছাড়া বাকি সবাই আমার জুনিয়ার। অভিদার ইউনিভার্সিটি তে ফাইনাল ইয়ার, আর আমার ফার্স্ট ইয়ার। বাকিরা বিভিন্ন কলেজে কেউ ফার্স্ট ইয়ার, কেউ সেকেন্ড ইয়ার কিংবা কেউ থার্ড ইয়ার। মেসের সবাইকেই ঠাম্মি খুব স্নেহ করেন, বিশেষ করে আমাকে একটু বেশি। বয়স হয়েছে অনেক, বেশিরভাগ দাঁত গুলো নড়বড়ে হয়ে গেছে আবার কিছু কিছু পড়েও গিয়েছে। শক্ত কিছু খাওয়ার খেতে গেলেই বিপত্তি। তাই বাড়ি থেকে আনা পাকা নরম তুলতুলে পেয়ারা পেলে উনি খুব খুশিই হন। সেই কারণে আমার প্রতি ওনার স্নেহটা একটু অধিক মাত্রায় ফুটে ওঠে।
শীতের সন্ধ্যে। বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। কম্বলটা জড়িয়ে খাটের উপর বেশ জাঁকিয়ে বসেছি। সামনে একটা বই খোলা অবস্থায় পড়ে আছে ঠিকই কিন্তু চোখ আমার বইয়ের দিকে নেই। চোখটা সোজা তাক করা রয়েছে সামনেই একেবারে উপরের বই তাকটার দিকে। যার একদিকে রাখা প্রায় ১০ ইঞ্চি লম্বা ৬ ইঞ্চি চওড়া ও ৪ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট ছোটো খাটো একটা লোহার ভারী বাক্স। চোখটা আমার ওই বাক্সের দিকেই নিবদ্ধ।
(অসমাপ্ত)