Subscribe Us

header ads

এক সপ্তাহের সম্পর্ক

 


দরজা খুলতেই দিনের উজ্বল আলো আমার চোখে এসে পড়ল চেয়ে দেখলাম কলেজ থেকে ফিরে রঙ্গন দরজা খুলে ভেতরে ঢুকছে পেছনে সৌভিককেও দেখতে পেলাম। রঙ্গন ভেতরে ঢুকে আলো জ্বালালো টিউব লাইটের সাদা উজ্বল আলোতে আলোকিত হয়ে উঠল পুরো ঘরটা। ব্যাগ রেখে রঙ্গন হাত মুখ ধুতে গেল। সৌভিক আমার পাশে বসে বলল,কি ব্যাপার কলেজ যাসনি কেন আজকে ? রঙ্গন বলল তোর নাকি মন খারাপ। কি হয়েছে আবার। ও বুঝেছি, আবার তুই সুরভীর কথা ভাবছিস ?”

মনে মনে এটাই আন্দাজ করেছিলাম। জানতাম রঙ্গন কলেজে গিয়ে দুজনকে সব কিছু বলে দেবে আর তারা ছুটির পর সটান মেসে হাজির হয়ে যাবেঅঞ্জন এখনো আসেনি তবে একটু পরে নিশ্চই সেও হাজির হয়ে যাবে। হাজার হোক ওরা আমার বন্ধু আমি এতক্ষন কিছু বলছি না দেখে সৌভিক বাচ্চাদের মতো বোঝানোর ছলে বলল, দেখ তোকে তো কতবার বলেছি ওর কথা ভাবতে না। যে চলে গেছে, চলে গেছে তার কথা ভেবে কি হবে।

আমি চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়েছিলাম। দুম করে করে উঠে পড়ে সৌভিকের দিকে ফিরে বললাম,আরে না রে বাবু ওসব কিছু নয়।

সৌভিক সঙ্গে সঙ্গে বলল,তবে মন খারাপ কিসের জন্য শুনি।

রঙ্গন ভেজা হাত পা নিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে গামছায় হাত মুখ মুছতে মুছতে সৌভিকের সুরে সুর মিলিয়ে বলল,হ্যাঁ কিসের জন্য শুনি

মন খারাপ, কথাটা শুনে কেন জানি না বুকের ভেতর সামান্য কষ্ট অনুভব করলামমিথ্যে হাসি হেসে বললাম,তেমন কিছু নয় রে। শুধু জানি না কেন, নিজেকে অপরাধী বলে মনে হচ্ছে

ব্যাপারটা কী একটু খোলাসা করে বলবি।সৌভিক বলল।

হ্যাঁ, সে সবই বলবো তোদের। সবকিছু বললে বোধ হয় একটু মানসিক শান্তি পাবো, তাই বলতেই হবে কিন্তু অঞ্জন কোথায়, এখনো এলো না।

কথা শেষ করতে না করতেই দেখলাম অঞ্জন হাজির। ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে হাসি মুখে বলল,কি রে আমার অনুপস্থিতি তে সব কিছু শেষ হয়ে গেল নাকি ?”

না না কিছুই শেষ হয়নি, এই তো সবে শুরু রঙ্গন বলল

সৌভিক কে সরিয়ে অঞ্জন আমার কাছে বসে বলল,প্রতিলিপি তে গল্প ছাড়ছিস দেখলাম। আমিও অ্যাকাউন্ট খুললাম আজকে, ফলো করেছি তোকে, ব্যাক ফলো করে দিবি।

সৌভিক বিরক্তির ভঙ্গীতে অঞ্জনকে বলল,আরে ধুর, তুই তোর ফলোয়ার পরে বাড়াবি আগে অংকুর কি বলছে শোন

হ্যাঁ হ্যাঁ বল বল কি বলবি বলছিলি।তারপর অঞ্জন আমার কানের কাছে এসে বলল, “ফলো করে দিবি মনে করে।

অঞ্জনের কথা শুনে আমি একটু হাসলাম। তারপর প্রতিলিপির ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে আমার কথা শুরু করলাম, “আজকে এই প্রতিলিপি নিয়েই বলবো। সোশ্যাল মিডিয়া তে আজকাল কতজনের সঙ্গে কত জনের, কত প্রকারের যে সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে এবং সেটা ভেঙেও যাচ্ছে তার কোনো হিসেব নেই আজকে তারই একটা উদাহরণ দেবো। বলতে পারিস এটা আমার জীবনের অভিজ্ঞতা তোদের সঙ্গে share করছি

তিন জনই আমার দিকে মনোযোগী হলো।

ঠিক এক সপ্তাহ আগের ঘটনা। তখন বাড়িতে রয়েছি আমি। হঠাৎ একদিন সকালে প্রতিলিপি অ্যাপটা খুলে দেখি একটা মেয়ে hi পাঠিয়েছে।

আমার কথা শুনে সৌভিক হঠাৎ উত্তেজনায় চেঁচিয়ে উঠল, “কি বলিস ভাই, মেয়ে।

হ্যাঁ একটা মেয়েপ্রথমে ভাবলাম রিপ্লাই দেবো কিনা। কিন্তু তারপর ভাবলাম, নিজের গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তাতে এমনিতেই মন ভালো নেইএখন যদি কারুর সঙ্গে কথা বলে নিজের কষ্ট গুলো কে একটু হলেও ভুলতে পারি  তবে ক্ষতি কি।

কষ্ট ভুলতে চাইলে আমাকে ফোন করতিস, আমি কথা বলতাম।সৌভিক বলল।

রঙ্গন সৌভিকের কথায় হা হা করে হেসে, ওর পিঠে একটা চাপড় মেরে বলল, গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে হওয়ার কষ্টটা শুধু মাত্র একটা মেয়ের সঙ্গে কথা বলেই চাপা দেওয়া যায়।

সৌভিক বলল, সরি সরি

তারপর আমিও hi পাঠালাম ওরে বাবা, তাতে কি খুশি। বললো আমি একজন লেখক হয়ে তাকে যে রিপ্লাই দেবো সেটা নাকি ও ভাবতেই পারেনি। ওর কথা শুনে হাসি পেল আমার।  মনটাও ভালো হয়ে গিয়েছিল অচেনা একজন মেয়ের সঙ্গে কথা বলে

কিছুক্ষন কথা বলার পর হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করলাম আমি।

তুই নম্বর চাইছিলিস ?” রঙ্গন বলল

ওটা অপ্রাসঙ্গিক

আচ্ছা বেশ প্রাসঙ্গিক টাই বল তবে।

হোয়াটসঅ্যাপে দু চারটা কথা বলে মোবাইলটা চার্জে দিয়ে আমি জরুরি একটা কাজে বেরিয়ে গেলাম। কিছুক্ষন পর ফিরে এসে দেখি একটা অচেনা নম্বরে মিসড কল SIM2 তে আমার রিচার্জ নেই আর কলটা SIM2 তেই এসেছিল তাই আর ফোন ব্যাক করতে পারলাম না আশ্চর্যের ব্যাপার সেই দিনই বিকেলে ওই অচেনা নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ এল

সন্ধ্যায় যখন ওর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলছি। তখন

ওর সঙ্গে মানে!এবারে অঞ্জন বলল।

ও সরি, প্রতিলিপি তে পরিচিত হওয়া মেয়েটার নামটাই বলা হয়নি। ওর নাম অন্তিনী রায় যদিও এটা ওর আসল নাম নয়। আসল নাম পরে জেনেছিলাম। একটা নিক নেম ছিল রাশি। আমি ওকে রাশি বলেই ডাকতাম।

ছাড় ওসব কথা সন্ধ্যায় হোয়াটসঅ্যাপে নাকি কি একটা বলছিলি।রঙ্গন বলল

হ্যাঁ, সন্ধ্যায় যখন রাশি কে মেসেজ করছি ঠিক সেই সময় ওই অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ আসতে লাগলো। প্রথমে আমি বললাম রং নম্বর, কিন্তু তারপরেও মেসেজের পর মেসেজ আসতেই থাকলবার বার বলছি রং নম্বর, রং নম্বর ঠিক সেই সময় হঠাৎ প্রোফাইলে একটা মেয়ের ছবি দেখতে পেলাম।”

সৌভিক চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,কি বলিস ভাই, আবার মেয়ে। তোর তো luck খুলে গেল। এদিকে গার্লফ্রেন্ড গেল, ওদিকে দু দুটো মেয়ে এল।

আমি নিঃশব্দে কিছুক্ষন হেসে নিয়ে সৌভিক কে বললাম,আরে বাবা, শেষ অব্দি শোন তবেই তো বুঝতে পারবি সবটাটুইস্ট আছে শেষে, বুঝলি।

ছাড়তো ওর কথা, তুই বলতে থাক। মেয়ের কথা শুনলে শুধু লাফিয়ে ওঠেঅঞ্জন বলল

রাশির সঙ্গে তেমন বেশি কথা হতো না সকালে কিছুক্ষন, কোনো সময় বিকেলে কিংবা সন্ধ্যার দিকে কেন জানি না ভালো লাগতো ওর সঙ্গে কথা বলতে। আর অন্যদিকে ওই অচেনা নম্বরের সায়ন্তি বলে মেয়েটা বার বার মেসেজ করে বিরক্ত করতে থাকলো। পরদিন সকাল থেকে রাত অব্দি মেসেজ করে বিরক্ত করল মেয়েটা (সায়ন্তি) সন্ধ্যায় ট্রেনে চেপে মেসে যাচ্ছি তখনও বিরক্ত করছে। মেসে যখন পৌঁছলাম ততক্ষণে মাথা যন্ত্রনা শুরু হয়ে গেছে আমার

রাশির সঙ্গে কয়েক দিন কথা হওয়ার পর বুঝতে পারলাম সে কারুর সঙ্গে প্রেম করতে চায় না। আমি তাকে বললাম প্রেম করতে হবে না, তুমি শুধু আমার বন্ধু হয়ে থাকবে। তাতে খুশিই হয়েছিল। আমায় বলেছিল, তার চেয়ে ভালো বন্ধু নাকি আমি আর পাবো না। ওর কথা শুনে আমি হাসলেও পরে বুঝেছিলাম ও ঠিকই বলেছিল।

মাথা নিচু করে শেষের কথা গুলো বলছিলামহঠাৎ এক ফোঁটা জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে অঞ্জন আমার থুতনি ধরে মুখটা তুলে বলল,অংকুর তুই কাঁদছিস অংকুর।”

না এমনি, কিছু না।

কি হয়েছে বল আমাদের। কাঁদছিস কেন তুই ? কোনো সমস্যা হয়েছে রাশির সঙ্গে আচ্ছা বল কি হয়েছে আমাকে আমি তার সঙ্গে কথা বলছি, তুই প্লিজ কাঁদিস নাঅঞ্জন বলল

ওর সঙ্গে কথা হয় না আর। হয়তো আর কোনো দিনও হবে নাআমি জানি, সে আমাকে ভুল ভাবছে কিন্তু সত্যিটা তো অন্য কিছু, এতে তো আমার কোনো দোষ নেই। জানি না কোন পাপে তার সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আজ ছিন্ন হয়েছে। নিজের হাতে আমি ওর নম্বর block করেছি এই হাতটা দিয়ে, এই হাত ভেঙে ফেলবো আমি আজকে।

নিজের হাতটা দেওয়ালে জোরে আছাড় মারতে যাবো ঠিক তখনই অঞ্জন আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলল,কি করছিস কি এসব। পাগল হয়ে গেছিস নাকি। আর তুই রাশির নম্বর block করতে গেলি কেন ?”

পরদিন থেকে আমি যখনই রাশিকে মেসেজ করতাম ঠিক তখনই ওই অচেনা মেয়েটা (সায়ন্তি) মেসেজ করে বিরক্ত করতো। বার বার জিজ্ঞেস করতো কাকে মেসেজ করছি, কি মেসেজ করছি। আমি বলতাম, আমার এক বন্ধু রাশির সঙ্গে কথা বলছি। সে (সায়ন্তি) জিজ্ঞাসা করতো just friend ? আমি বলতাম, friend তো friend হয়। কিন্তু সে নাছোড় বান্দা, বিরক্ত করতেই থাকলো। একসময় আমি আর সহ্য করতে না পেরে বলে দিলাম রাশি আমার গার্লফ্রেন্ড হয়, যাতে পরে আর বিরক্ত না করেকিন্তু আমি ভুল ছিলাম। এই কথা বলার পর থেকে ওই অচেনা নম্বর থেকে আরো বেশি মেসেজ আসতে লাগলো। শুধু একটাই কথা, কি তোমার গার্লফ্রেন্ড হয় ?

এই ভাবে একদিন কাটলো। আজকে সকাল থেকে অন্য কাণ্ড। বার বার ফোন আসতে থাকলো ওই অচেনা নম্বর থেকে ভাবলাম, কি বেয়াদব মেয়ে রে বাবা। রাশির সঙ্গে আমার কি সম্পর্ক সেটা ওর জেনে কি হবে ?”

সেটাই তো, আমিও বুঝতে পারছি না রঙ্গন বলল

সৌভিক বলল,বোধ হয় তোকে ওই অচেনা মেয়েটা (সায়ন্তি) প্রপোজ করতে চাইছিল। সেই জন্য রাশির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করছিল।

আমিও প্রথম প্রথম সেটাই ভাবতাম।  তারপর যখন আসল পরিচয় জানতে পারি তখন আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গিয়েছিল।

আসল পরিচয় কি ?” অঞ্জন অবাক ও কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করল

আসলে ও কোনো মেয়ে ছিল না। একজন ছেলে, মেয়ে সেজে আমাকে মেসেজ করতো।

কি বলছিস ভাই।সৌভিক মাথায় হাত দিয়ে বলল।

হ্যাঁ একটা ছেলে। যার সঙ্গে রাশির এক বছরের পুরনো সম্পর্ক ছিল। আর যার জন্য রাশির সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভাঙলো

অঞ্জন বলল,কিন্তু তুই প্রথমে বললি, রাশি কারুর সঙ্গে প্রেম করতে চায় না

অঞ্জনের পিঠে হাত রেখে রঙ্গন বলল, “আরে বুঝলি না, ছেলেটা রাশির পাণিপ্রার্থী ছিল।  কিন্তু, ছেলেটা রাশিকে ভালোবাসতে চাইলেও রাশি বোধ হয় চায়নি

আচ্ছা। কিন্তু ওই ছেলেটা তোর নম্বর কোথা থেকে পেল ?” আমার দিকে তাকিয়ে অঞ্জন প্রশ্নটা করল।

আসলে মেয়েটা খুব ভালো মনের এবং সরলআমি রাশির কথা বলছি রাশির টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট টা ওই ছেলেটার মোবাইলে login করা ছিল। কিভাবে login করা হয়েছে সেটা জানি না, কিন্তু login ছিল এবারে আমি রাশিকে মেসেজ করি কিংবা রাশি আমাকে মেসেজ করুক সমস্ত মেসেজ সেই ছেলেটা দেখতে পেত। এমন কি আমার মোবাইল নম্বরটাও টেলিগ্রাম থেকেই পেয়েছে।

কৌতূহলী হয়ে সৌভিক জিজ্ঞাসা করলো, এসব কথা জানলি কি করে তুই ?”

ওই ছেলেটাই বলেছে আমায়।

মানে, কখন ?” অঞ্জন বলল

কলেজ যাওয়ার সময়ওই ছেলেটাই ফোন করে বলল, রাশির সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিতে কিংবা যদি পারি তবে রাশির নম্বর block করে দিতেও বলল।

তোরাই বল এখানে আমার কি করা উঠিত কারুর সঙ্গে বন্ধুর মতো কথা বলাও কি অপরাধ। নাকি কাউকে বন্ধু ভাবা অপরাধ।

যখন থেকে জানতে পেরেছি, রাশির সঙ্গে ওই ছেলেটার সম্পর্ক রয়েছে। তখন থেকে নিজেকে অপরাধী বলে মনে হচ্ছে শুধু এটাই ভাবছি আমি বোধ হয় ওদের মধ্যে কোনো বাধা কিংবা বিপত্তি। সেটা কি রাশির সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্কের জন্য। যদি তাই হয় তবে কি এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখাটা ঠিক। তোরাই বল আমায়।

তুই প্লিজ এতোটা ভেঙ্গে পড়িস নাশান্ত সৌভিক আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল

গার্লফ্রেন্ড চলে গেল, আপাতত বন্ধু ভেবে একজন মেয়ের সঙ্গে কথা বলে সব কষ্ট ভুলতে চাইছিলাম। এখন দেখছি সেই বন্ধুকেই ভুলতে পুরোনো কষ্ট গুলোকেই আবার আপন করে নিতে হবে

কষ্ট পাস না, দেখবি রাশি একদিন সব সত্যিটা জানতে পারবে। আর রাশি যদি কথা না বলে তবে আমরা তো রয়েছি নাকি। সব সময় তোর পাশে