My first Story
(25/10/2014 – 26/10/2014)
তখন আমি ক্লাস নাইন...
এই প্রথম ভ্রমণ। ভ্রমণের স্বাদ
কেমন হবে তা বুঝে উঠতে পারছি না। আনন্দের সীমা পরিসীমা নেই ভ্রমণে যাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে। যদিও অনেক আগে থেকেই দীঘা যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল সকলের মধ্যে।
অবশেষে আমাদের ক্লাস নাইনের অ্যানুয়াল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ঠিক করা হলো যে, সামনের সপ্তাহের বৃহস্পতি বার যাওয়া হবে। ৪০ থেকে ৫০ জন ধরে এমন একটা বাস ঠিক করা হলো। তার মধ্যেই
আমাদের ক্লাসের ১২ জন।
অবশেষে সেই দিন এলো। বলা ছিল ৩টে কিংবা সাড়ে ৩টের মধ্যে গাড়ি ছাড়বে আর সেখানে পৌঁছাবে
৫টা কিংবা সাড়ে ৫টায়, যাতে ওখানে পৌঁছে
সূর্যোদয় টা দেখতে পায় সবাই। কিন্তু সেটা আর হলো না গাড়ি ছাড়লো সাড়ে ৫টার সময়।
টানা দু'ঘণ্টা গাড়ি চলার পর দীঘার সমুদ্রের কাছে গাড়ি
পৌঁছালো। বাসের ভেতর থেকেই
সমুদ্র দেখা যাচ্ছিল। সমুদ্রটা যেন একটা সমতল জায়গার উপর নীল চাদর বেছানো বলে
মনে হচ্ছিল। আর যতদূর অবধি
চোখ যায় মনে হচ্ছিল যেন সমুদ্রটা ক্রমশ উঁচু হয়ে দিগন্তে মিশেছে।
গাড়ি পৌঁছালো সমুদ্রের কাছাকাছি একটা জায়গায়। পার্কিংয়ের জন্য সরকারি যেটুকু জায়গা ছিল তা অনেক আগেই অন্যান্য টুরিস্টের গাড়ি দখল করে নিয়েছিল। সেই কারণে আমাদের গাড়িটাকে রাস্তার একপাশে পার্ক করাতে হলো।
হোটেল ভাড়া করতে দেরি হচ্ছে দেখে কয়েকটা ছেলে সমুদ্র দেখে
ফিরছিল। তাই আমি আর আমার দুজন বন্ধু ভাবলাম আমরাও একবার সমুদ্রটাকে চাক্ষুষ দেখে আসি। তাই দেরি না করে বেরিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু এরই মধ্যে যে একটা বিশ্রী ঘটনা ঘটে যাবে সেটা আর
ভাবিনি।
ভাড়া করা হোটেলে সবাই যাবে বলে বাসে বসে আছে। এদিকে আমরা নেই তাই বাস ছাড়তে পারছে না। স্যারেরা ও হন্যে হয়ে চারদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আমরা তখন সমুদ্রের কাছাকাছি।
সমুদ্রের কাছে এসে যখন সমুদ্রটাকে একপলক দেখলাম তখন তার থেকে আর চোখ ফিরিয়ে
নিতে পারলাম না। দিগ দিগন্তব্যাপী শুধু জল আর জল। পৃথিবীতে যে তিন ভাগ জল ও এক ভাগ স্থল তা স্বচক্ষে দেখার পর দৃঢ় বিশ্বাস হলো।
বেশিক্ষণ না থেকে গাড়িতে উঠবো বলে রওনা হলাম। কিন্তু মাঝ রাস্তাতেই হঠাৎ দুজন স্যারের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। নতুন এসেছি, অজানা জায়গা, হারিয়ে যেতে পারি ইত্যাদি ইত্যাদি বলে তিনজনকে খুব বকলেন দুজন স্যার।
হোটেলে পৌঁছাতে বেজে গেল সকাল সাতটা। দুটো রুম ভাড়া করা হয়েছিল। খুব বড়ো বড়ো দুটো রুম। একটা ছেলেদের আর অন্যটা মেয়েদের।
বাইরে ভীষণ গরম। ঠাণ্ডা রুমের ভেতর এসে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কেউ কেউ আবার খাটের উপর চিৎপাত হয়ে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষন পরে সবার জন্য টিফিন চলে এল। খাওয়া দাওয়া সেরে সবাই বেরিয়ে পড়ল সমুদ্র স্নানে যাবে বলে। দুটো রুমে তালা পড়লো।
সমুদ্রে যাওয়ার পথে পড়ল অমরাবতী পার্ক। সেখানে কিছুক্ষন কাটিয়ে সবাই সমুদ্রের কিনারায় পৌছালাম। দূর থেকে সমুদ্রটাকে যেরকম লাগছিল কাছে কিন্তু মোটেও সেরকম
টি নয়। সমুদ্রের ঢেউয়ের বিকট শব্দ, সামুদ্রিক পাখির ডাক আর মানুষজনের কলরব একসঙ্গে মিশে এক অদ্ভুত গমগমে পরিবেশের সৃষ্টি করছিল।
বিশাল বিশাল সারিবদ্ধ ঢেউ গুলি সশব্দে আছাড় খেয়ে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে অবশেষে প্রান্তরে মিশছে। সামনে অনন্ত জলরাশি আর পেছনে বালি আর বড়ো বড়ো পাথর।
সমুদ্রের জলে স্নান করে মনটা আনন্দে ভরে গেল। দু একবার তো নাকে মুখে নোনতা জল ঢুকে গেল। অর্ধ ঘন্টা স্নান করে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছিল না। মনে হচ্ছিল আরও একটু থাকি আরও একটু স্নান করি। কিন্তু কি আর করা যাবে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না, তাই ফিরতি পথ ধরলাম।
রুমে ফিরে ভেজা জামা কাপড় ছেড়ে শুকনো জামাকাপড় পরে নিলাম। রান্নার পূজারীরা রান্না করতে ব্যস্ত। আসবার সময় বাসে করে রান্নার সমস্ত সামগ্রী এমন কি জ্বালানির জন্যে অনেক ঘুঁটেও নিয়ে আসা হয়েছিল সঙ্গে করে। এখন সে সমস্ত ঘুঁটে বিশাল একটা আঁচের মধ্যে পোড়ানো হচ্ছে এবং উপরে প্রকাণ্ড কড়াইতে মাংস
রান্না চলছে। মাংসের গন্ধ নাকে আসছে জিভে জল চলে এল।
খাওয়ার মেনু খুব ভালো ছিল তাই বেশ মোজ করে খেলাম।
খাওয়া-দাওয়ার পালা সেরে কিছুক্ষণের মধ্যেই সবকিছু গোছগাছ করে
সবাই বাসে উঠে পড়ল সাইন্স সিটি তে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
সায়েন্স সিটিতে স্কুলের ছেলে বলে ১০ টাকার টিকিট ৫ টাকায় হয়ে গেল। ভেতরে ঢুকতেই দুদিকে দুটো পথ। ডান দিকের পথ ধরে যেতেই একটা
ঘরের মধ্যে ঢুকলাম। শুরুতেই দেখা গেল বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক প্রাণী। এত প্রকার
সামুদ্রিক প্রাণীর অস্তিত্ব যে আছে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কিন্তু স্যার যখন বললেন এ তো অতি সামান্য কিছু তখন ভীষণ আশ্চর্য্য হলাম আরও নানা প্রকার আশ্চর্য্য সব ব্যাপার লক্ষ্য করার পর হাজির হলাম একটা
অদ্ভূত কম্পিউটারের সামনে। কম্পিউটার তো শিখিনি তাই যেটা সেটা বোতাম টিপতে লাগলাম।
আরও একটা ব্যাপার যেটা সবাইকে আকর্ষিত করছিল। কাঁচের তৈরী গোলক ধাঁধা। যেখানে একবার প্রবেশ করলে বার হওয়া এত সহজ ছিল না। কারো কারো মাথাতে অনেকবার ঠোক্করও লাগলো। আমার তো বুড়ো আঙ্গুলে এমন লেগেছিল যে তিন দিন ব্যাথা ছিল।
সায়েন্স সিটি থেকে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো।
গাড়ি এসে পৌঁছালো ওল্ড দীঘাতে। সেখানকার দৃশ্য সবাইকে এতটাই চমৎকৃত করলো যে কখন গাড়িতে উঠলাম কখন গাড়ি ছেড়ে দিল বুঝতেই পারলাম না। ওখানকার সমুদ্রের খাড়াই এতটাই বেশি ছিল এবং জলোচ্ছ্বাস এতটাই প্রবল ছিল যে, যদি কেউ
পড়ে যেত তাহলে তাকে আর বেঁচে ফিরে আসতে হতো না।
গাড়ি আবার থামলো শংকরপুরে এসে। ততক্ষনে চারিদিকটা গাঢ় অন্ধকারে জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। অন্ধকারে এখানে সেখানে দুএকটা ট্রলার ছাড়া আর তেমন বেশি কিছু দেখতে পেলাম না শংকরপুরে।
ক্লান্ত শরীরটাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি চলতে শুরু করলো ক্রমশ বাড়ির দিকে।