Subscribe Us

header ads

কাদোমাদো

Photo Credit : Meta AI

বর্ষা মুখর দিনসবেমাত্র বর্ষাকাল ঢুকেছেবর্ষার আউশ ধান চাষের ঠিক আগের মুহূর্তদুএকবার বিরাম ছাড়া বৃষ্টির ফোঁটা আকাশ থেকে অনবরত পড়তেই আছেরাস্তাঘাট, খালেবিলে কিছু কিছু জল জমেছেএমনই একটি দিনে, স্কুল ছুটির পর তিন বন্ধুর স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল

স্কুল ছুটির পর বৃষ্টি পড়া যেন আরও বেড়ে গেলছেলে তিনটি রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটেই আসছিলতাদের তিন জনেরই ছাতা ছিল আর ছিল কাঁধে দুই হাতল ওয়ালা নাইলনের বইয়ের ব্যাগযখন ওরা  মাঝপথে একটি গাছ ঘেরা পুকুরের কাছে এল, তখনই ঘটল একটা কান্ড :

 

কিছুদূর থেকে প্রথম ছেলে বিভাস দেখলো যে, রাস্তা থেকে দু আড়াইশো হাতের মধ্যে এক কালো বেঁটে ষাঁড় দাঁড়িয়েতার ভয় করছিলো, যদি তাদের তাড়া করে আসেপরক্ষনেই তার এই আশঙ্কার কথা শুনে দ্বিতীয় ছেলে অমিত বলে উঠল, “ষাঁড়টা তো অনেক দূরে রয়েছেতার আসতে আসতে অনেকটা পথ চলে যাবো।” এই কথায় তৃতীয় ছেলে সমিরও সায় দিল

কিন্তু বিভাসের খটকা লাগছিলমনে মনে ভাবলো যদি তাদেরকে তাড়া করে আসেযদি কোনো ভয়ঙ্করওর ভাবনা শেষ না করেই একবার পেছন ফিরে তাকাতেই, তার শরীরের সমস্ত লোম খাড়া হয়ে উঠলো

ষাঁড়টা তো আমাদের দিকেই ছুটে আসছে।” ও তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো

অন্য দুটি ছেলে দেখা মাত্র তৎক্ষণাৎ ছুটতে শুরু করলোতাদের সঙ্গে ছুটলো বিভাসও

কিছুক্ষন আগে অমিত বিভাসকে বলেছিল যে সে গাছে চড়তে পারে কিনাকারণ, যদি ষাঁড়টা ওদের তাড়া করে তাহলে বাঁচার তো একটা উপায় ভেবে রাখতে হবেতার কথার উত্তরে বিভাস বলেছিলো যে সে একটু একটু জানে গাছে চড়তেএখন তার পরীক্ষার সময়

তিনজন ছুটছেঅমিত একটু অন্যমনস্ক থাকার কারণে সে একটু পিছিয়ে পড়লোতাদের পেছনে ভয়ঙ্কর দুর্দান্ত দ্রুতগামী ষাঁড়কি হবে কেউ বুঝতে পারছে নাঅবশেষে বিভাস একটা ফ্যাঁকড়া যুক্ত গাছ দেখতে পেয়ে কোনরকমে তাতে উঠে বসলসেই সঙ্গে সমীরও একটা সরু লিকলিকে গাছে জুতো পরেই উঠে পড়লোআর বাকি একজনঅমিত বাড়ির দিকে যাওয়ার জন্য ক্ষেতের আল বরাবর ছুটতে লাগলো

এদিকে ষাঁড়টা তাদের দুজনকে গাছে উঠতে দেখে ওদেরকে ছেড়ে দিল এবং লক্ষ্য পড়লো অমিতের দিকেঅমিত পড়েছে মহা ফাঁপরেক্ষেতে নামায় তাকে ছুটতে হল কাদার উপর দিয়েপেছনে ষাঁড়টাও তার পঞ্চাশ হাতের মধ্যেকি করবে কিছুই না বুঝতে পেরে সে নামলো আল ছেড়ে লাঙ্গল করা এক হাঁটু কাদাতেষাঁড়টা তাকে ধরে ধরেধরলে যে কি কান্ডটাই না ঘটবে তা আর ভেবে কাজ নেই

এক হাঁটু কাদাতে নেমে কি বোকামি টাই না করলো অমিতকাদা চটকে চটকে তার সারা সর্বাঙ্গ কাদায় মাখামাখি হয়ে গেলশেষমেশ কোনো উপায় না দেখতে পেয়ে, অমিত সেই জলকাদার মধ্যে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো

এদিকে ষাঁড়টা যেই দেখলো ছেলেটা আর নেই তখন যেন সে পাগল হয়ে গেলযেন তার হাতের শিকার ফসকে গেল এমনি একটা ভঙ্গিমায় নাক দিয়ে ফোঁস-ফোঁস করে নিশ্বাঃস ছাড়তে লাগলো

ওদিকে ততক্ষণে ওই দুজন ছেলে গাছ থেকে নেমে লাল্টু কে হাঁক ডাক দিচ্ছিলকিন্তু লাল্টু দেখলো ষাঁড়টা এখনো এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে। “আর উঠে কাজ নেই” বলে সে সেখানেই শুয়ে থাকলো ষাঁড়টা না যাওয়া পর্যন্ত

যখন দেখলো ষাঁড় কিছু দূর চলে গেছে, তখন সে ভয়ে ভয়ে উঠে দাঁড়ালোদাঁড়িয়ে দেখলো যে তার শরীর সহ জামাকাপড়ের অনেকটা উন্নতি হয়েছে

তার কাদো মাদো নরমূর্তি দেখে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা দুজন ছেলে বেজায় হাসতে লাগলোএটা দেখে লাল্টু র বড্ড রাগ হলোতাকে দেখে সাহায্য করার বদলে কিনা হাসছে

আধ ঘন্টা কাদো মাদো শরীরটা জলে ধোয়ার পর আসল লাল্টু বেরিয়ে এলো

ওদিকে ষাঁড়টা তাদেরকে ছেড়ে আবার আর একজনকে ধরেছেযেন অন্নপ্রাশন খাওয়ানোর জন্য সবাইকে আহ্বান করছে