Subscribe Us

header ads

আড় চোখে


Photo Credit : Copilot by Microsoft

আবিরের মনটা ভালো নেই স্কুলে আজকে একটা মেয়ের সঙ্গে প্রথমে ঝগড়া আর তারপর মারামারি হয়ে গিয়েছিল। তারপর স্যারের কাছে নালিশের পর আবিরকে ৫০ বার কান ধরে উঠবস করতে হয়েছিল আবির তখন থেকেই ভীষণ রেগে ছিল মেয়েটার উপরমনে মনে হয়তো মেয়েটাকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায় সেই কথাই ভাবছিল।

স্কুল থেকে ফিরে খানিকটা বিশ্রামের পর, বাড়ির সামনের ছোটো জমিটা কোদাল দিয়ে কোপাচ্ছিল বাগান তৈরি করবে বলে কিছুক্ষন কোপানোর পর গায়ে পরিহিত স্যান্ডো গেঞ্জীটা একেবারে ঘামে ভিজে দরদরে হয়ে গিয়েছিল কপাল থেকে ঝরে পড়া ঘাম গুলোকে হাত দিয়ে মুছতে মুছতে আবির দেখলো, একটা মোটর সাইকেল সামনের মোরাম বিছানো সরু রাস্তাটা দিয়ে এসে ওদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালোএকজন বছর চল্লিশের শার্ট প্যান্ট পরা ভদ্রলোক। তার পেছনে বসে Sky-blue রঙের চুড়িদার পরিহিত একটি সুশ্রী ষোড়শী বালিকা মাথা থেকে খোঁপা হীন ঘন কালো চুল পিঠের ওপর এসে পড়েছে।

মেয়েটার মুখটা উল্টো দিকে ফেরানো ছিল বলে এতক্ষন আবির ঠিক চিনতে পারছিলো না মেয়েটাকেএখন হঠাৎ করে মেয়েটা ঘাড় ফিরিয়ে আবিরের দিকে তাকাতে আবির ঢোক গিলে দু-পা পেছনে সরে গেলএ তো শ্রেয়সী যার সঙ্গে আজকে স্কুলে ওর ঝগড়া আর মারামারি হয়েছিল কিন্তু এ তাদের বাড়িতে হঠাৎ কেন? আবির ঠিক বুঝে উঠতে পারল না। তবে কি ও নালিশ করতে এসেছে নাকি ওর নামে।

শ্রেয়সী ততক্ষনে আবিরকে দেখে মুখ টিপে হাসছিল আবির দেখলো তার গায়ে শুধু একটা থ্রি-কোয়ার্টার আর একটা গেঞ্জী ছাড়া কিছুই নেই। সারা গা থেকে ঘাম ঝরছে

ইস কি লজ্জা। ছি ছিবলে আবির কোদাল ফেলে বাড়ির ভিতর দৌড়ে পালাল

এই দেখে শ্রেয়সীর মুখে হাসির মাত্রা আরো বেড়ে গেলো তারপর সেও তার বাবার সঙ্গে বাড়ির ভেতর ঢুকলো।

বাড়ির ভেতর ঢুকে আবির তার মা কে জিজ্ঞাসা করলো ওদের ব্যাপারে মা বললেন,তোর পিসিকে আজকে ছেলের বাড়ি থেকে দেখতে আসার কথা ছিল না, ওরাই তো।

কিন্তু এই দুজন মাত্র।

আরে বোকা ছেলে, বাকিরা আসছে এরা একটু আগে চলে এসেছে

তারপর একটা গাড়ির শব্দ পেয়ে মা বললেন, “ওই দেখ বাকিরা ও চলে এলো যা এখন আর কথা বাড়াস না প্রচুর কাজ আছে আমার।বলে মা রান্না ঘরে চলে গেলেন।

আবির দরজার কাছে দাঁড়িয়ে অচেনা আগন্তুকদের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ দেখলো শ্রেয়সী ওর দিকে একবার আড় চোখে তাকালো চোখের ভুল নয়তো আবার কিন্তু দ্বিতীয় বার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে আবিরের দ্বিধা ভঙ্গ হলো সত্যিই শ্রেয়সী সবার নজর এড়িয়ে ওর দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে।

আবির দেখলো হঠাৎ করেই শ্রেয়সীর একটা চোখের পাতা বন্ধ হয়েই আগের অবস্থায় ফিরে গেল আবিরের মুখ হাঁ হয়ে গেল একি এবার তো শ্রেয়সী চোখ মারছে ওকে। আবির বিরক্ত হয়ে মনে মনে বললো, “অসভ্য মেয়ে, ছিঃ

আবিরের নিরবে করা বিরক্তি গুলো ওর চোখে মুখে ফুটে উঠতে দেখে শ্রেয়সী শুধু মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো

এদিকে ছেলের বাড়ি ও মেয়ের বাড়ির লোকজন মিলে বিয়ের পাকা কথা করলো। তারপর পঞ্জিকা দেখে বিয়ের দিনক্ষণ স্থির করা হলো

পরের দিন স্কুলে আবির এবং শ্রেয়সীর মধ্যে আর কোনো প্রকার মনোমালিন্য হলো না, বরং বন্ধুত্ব হলো। আর এই বন্ধুত্ব টা যে খুব শীঘ্রই প্রেমে পরিণত হবে সেটা দুজনেই বেশ আন্দাজ করতে পারছিলো

বিয়ের দিন সবাই যে যার মতো কাজে ব্যাস্ত ঠিক তেমনি আবির এবং শ্রেয়সী একটু অদূরে পুকুর ঘাটের সিঁড়িতে পা ঝুলিয়ে একে অপরের হাতে হাত রেখে প্রেমালাপে ব্যাস্ত শ্রেয়সী আবিরের কাঁধে মাথা রেখে কৃষ্ণা চতুর্দশীর অসম্পূর্ণ সাদা ধবধবে চাঁদের পানে তাকিয়ে রয়েছে। আজ পূর্ণিমা নয়। কিন্তু অনন্ত প্রেমে পরিপূর্ণ দুজন প্রেমিক প্রেমিকার প্রেমের জোয়ার যেন বলে দিচ্ছে আজকে রাতে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে