মেসের সিনিয়াররা একসঙ্গে বসে গপ্প করছিল। অভিক তার নিজের বেড টা তে বসে ইউটিউব স্ক্রল ডাউন করছিল। হঠাৎ সিনিয়রদের একটা কথা ওর কানে এলো। একজন আর একজনকে হাসতে হাসতে বলছে, “সেই জন্যই তো বলি কোথাও কোনো সুন্দরী মেয়ে দেখলে এই রকম করে পালিয়ে আসবি।”
অভিক নড়েচড়ে বসল বাকি কথাটা শোনার জন্য।
“ধর কোথাও একটা সুন্দরী মেয়ে দেখলি। ধর, ধর
বাস স্ট্যান্ডে একজনকে দেখলি। দেখলি তোর থেকে সে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তখন
তুই তার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচালি। প্রথমটা হয়তো ও দেখলো না। তারপর আবার ভেংচালি।
তখন হয়তো দেখলো কিন্তু এড়িয়ে গেল ব্যাপারটা। এরপর আবার ভেংচালি। তখন দেখবি ও
দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো। পরের বার যখন তুই ভেংচাবি তখন হয়তো সে আগুন হয়ে যাবে।”
সবাই একসঙ্গে হেসে উঠলো। একজন সিনিয়ার হাসতে
হাসতে বলল, “ওই মুখটা দেখতে বেশ লাগবে কিন্তু তখন।”
এই কথা শুনে সিনিয়ারদের মধ্যে কেউ কেউ বলল –
না না এটা একদমই ঠিক নয়।
আবার কেউ কেউ বলল – বেশ মজার ব্যাপার কিন্তু।
আবার কেউ কেউ – হ্যাঁ যদি না আবার পাগল ভেবে বসে।
অভিকের ব্যাপারটা বেশ মনে ধরেছিল। বেশ interesting কিন্তু। একবার বাড়ি যাওয়ার সময় স্টেশনে experiment করে দেখতে হবে।
এর পর নানা কাজের মধ্যে অভিক ব্যাপারটা প্রায়
ভুলেই গেল। প্রায় সপ্তাহ খানেক পরে ট্রেনে চেপে অভিক বাড়ি ফিরছিল। নিজের গন্তব্য
স্টেশনে আসার পর ও ট্রেন থেকে নেমে পড়ল। আর নামতেই হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেল
সেদিনকার মেসের ব্যাপারটা। ও একবার পেছন ফিরে তাকাল। দেখল প্রায় সামনের কামরার
একটা জানালাতে এক ওরই বয়সির অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে গালে হাত দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে
রয়েছে।
ট্রেনটা মাত্র দু-মিনিট দাঁড়ায় স্টেশনে। অভিক
দেরি না করে তার experiment শুরু করে দিল।
প্রথমে অভিক তার জিভ বের করে ভেংচালো। মেয়েটা
লক্ষ্য করলো না। দ্বিতীয়বার অভিক জিভ বের করার সঙ্গে সঙ্গে কানের দুদিকে দুটো হাত
রেখে ভেংচালো। এবার মেয়েটার নজর পড়লো অভিকের দিকে। মেয়েটা চোখ বড়ো করে মুখ হাঁ
করে অভিকের দিকে তাকালো। পরের বার অভিক জিভ আর হাত বাদেও তিড়িং বিড়িং করে পা
নাড়াতে নাড়াতে ভেংচাতে লাগলো। এবার মেয়েটা সত্যি ভীষণ রেগে গেল। মনে হল কাছে
পেলে অভিক কে পুরো চিবিয়ে খায়।
অভিকের ততক্ষনে খুব হাসি পেয়েছে। একবার মনে
হলো মেয়েটা যদি ট্রেন থেকে নেমে আসে তবে সে উল্টো মুখে সোজা দৌড় লাগবে। কিন্তু
সেটা আর হলো না। হুইসেল দিয়ে ট্রেন ছেড়ে দিল।
অভিক মনে মনে হাসতে হাসতে বাড়ির দিকে রওনা
দিল।
দুদিন বাড়িতে কাটিয়ে একদিন বিকালে মেসে ফিরবে
বলে স্টেশনে এসে দাঁড়িয়েছিল অভিক। ট্রেন আসতে সামনের একটা ফাঁকা কামরা দেখে উঠবে
বলে ট্রেনের কামরার ভেতর মুখ বাড়ালো অভিক। আর যেই না মুখ বাড়িয়েছে অমনি দেখলো
ভেতরে বসে রয়েছে সেদিনকার সেই মেয়েটা। অভিক ফট করে ট্রেন থেকে নেমে পড়ল। কিন্তু
ততক্ষনে মেয়েটা ওকে দেখে ফেলেছে।
অভিক অন্য একটা কামরাতে উঠতে যাবে দেখল সামনে
সেই মেয়েটা দাঁড়িয়ে রয়েছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে
একবার ঢোক গিললো অভিক। তারপর ওই কামরা থেকে নেমে অন্য আর একটা কামরাতে উঠতে যাবে
অমনি মেয়েটা বলে উঠল, “কি হলো জায়গা পছন্দ হচ্ছে না নাকি।”
“অ্যাঁ...,হ্যাঁ। মানে না, মানে...।”
“আমি যেখানে বসেছি ওখানে জায়গা রয়েছে, আসতে
পারেন।”
অভিক মনে মনে ভাবলো – ওখানে নিয়ে গিয়ে সবাইকে
বলে ক্যালাবে না তো আবার।
“আরে কি হলো শুনতে পাননি নাকি?”
“অ্যাঁ... হ্যাঁ শুনেছি।”
“তবে চলে আসুন।”
অগত্যা কোনো উপায় না পেয়ে অভিক গিয়ে বসল
মেয়েটার কাছে। মেয়েটা সেদিনের মতোই জানালা ধারে বসেছিল। বলল, “হ্যাঁ এবার বলুন।”
“কী বলবো।”
মেয়েটা স্বাভাবিক স্বরেই বলল, “মেয়ে দেখলে কি
মাথার পোকা গুলো নড়ে উঠে নাকি?”
“না আমি তো মাথাতে শ্যাম্পু করি। পোকা নেই।”
মেয়েটা নিজের কপালে চাপড় মেরে বলল, “আরে ধুর,
ওই দিন কেন ওভাবে ভেংচাচ্ছিলেন।”
অভিক প্রথমটা বলতে চাইছিল না। মেয়েটা জোর করতে
অভিক তার মেসের সিনিয়ারদের কাছে শোনা কথা গুলো থেকে কিভাবে কি করেছিল সমস্তটা
বলল।
শুনে মেয়েটা ভীষণ হাসতে লাগলো। মেয়েটাকে
হাসতে দেখে অভিক একটু নিশ্চিন্ত হলো। একবার মেয়েটার দিকে তাকালো। সেদিনের রাগ আর
আজকের হাসির মধ্যে হাসিটাই ওর বেশি পছন্দ হলো।
হাসতে হাসতে মেয়েটা বলল, “সত্যি, এরকমও কেউ
আছে আপনাকে দেখে বুঝলাম।” বলে তারপর আবারও হেসে চললো।
অভিক এক দৃষ্টে মেয়েটার দিকে তাকিয়েছিল। বলল,
“By the way,
you are so beautiful.”
অভিকের কথা শুনে মেয়েটা তার দিকে ফিরে তাকাল।
তারপর ঠোঁট কামড়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।
ট্রেন ছাড়ার সময় হয়েছে। তীব্র হুইসেল দিয়ে
ট্রেন ছাড়লো।