এক
ব্যক্তি দীর্ঘ ৫-বছর
ধরে অক্লান্ত
পরিশ্রম করে একটি পুকুর খনন করছিলেন। দিনের
পর দিন মাসের পর মাস ধরে ছোট্ট একটা ডোবা থেকে তৈরি করে ফেললেন এক বিশাল পুকুর। তারপর পুকুর পাড়ে
বসে আকাশের পানে তাকিয়ে থাকলেন।
একদিন
ওই রাস্তা দিয়ে এক বৃদ্ধ
পথিক যাচ্ছিলেন।
হঠাৎ, ওই ব্যক্তিকে মাথায় হাত রেখে
পুকুর পাড়ে বসে আকাশের পানে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন,“কি
হে বাপু তুমি একা এই নির্জন জায়গায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে কি ভাবছো?”
ব্যক্তিটি
বললেন,“আমি
দীর্ঘ সময়ের প্রতীক্ষায় রয়েছি,কবে
কালো মেঘ করে ঝাঁকে ঝাঁকে নেমে আসা বৃষ্টি কণার বর্ষণে ভরিয়ে তুলবে দীর্ঘ সময়ের পরিশ্রমে
তৈরী করা আমার এই পুকুরটিকে।”
বৃদ্ধ মুচকি হেসে বললেন,“বোকা
ছেলে কোথাকার। তুমি
জানো না এটা মরুভূমি। মরুভূমিতে
কি বৃষ্টি হয় নাকি। মরুভূমি
তো শুষ্ক হয়। তার
কি জল ধারণ করার ক্ষমতা আছে নাকি। সে শুধু সবকিছুকে
শুকিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। জল ধারণ করবার ক্ষমতা যে তাকে ভগবান দেননি।”
ব্যক্তিটি
মনে মনে ভাবেন,“তাইতো,এই
দীর্ঘ সময়ের মধ্যে একবারও তো এখানে বৃষ্টি হতে দেখেনি সে। অথচ তার গায়ে দেওয়া
ঘামের বিন্দু গুলোকে মরুভূমির এই শুষ্কতা যেন স্পঞ্জের মতো শুষে নিয়েছে। তবে কি তার এত দিনের
পরিশ্রম বৃথা। কিন্তু
ও যে অনেক দূরে বিদ্যুতের ঝলকানি দেখছে।”
বৃদ্ধ
তার মনের ভাব আঁচ করতে পেরে বললেন,“তুমি
যে বিদ্যুতের ঝলকানি দেখেছো,সেটা
ওই দূরে সমভূমিতে। যেখানে
চাষ আবাদ হয়। যেখানে
রয়েছে সবুজ অরণ্যানি। মরুভূমির
মতো সেখানে এতো শুষ্কতা নেই। তুমি বৃথাই পরিশ্রম করছো।” এই
বলে বৃদ্ধ চলে গেলেন।
ব্যক্তিটি
সীমাহীন ধুধু মরুভূমির দিকে তাকিয়ে ভেজা চোখে আর্ত চিৎকার করে বললে,“একই
ধরিত্রীতে তো সবাই রয়েছে,
কিন্তু তুমি কেন এতো নির্দয়। তোমার কি হৃদয় বলে কিছুই নেই। নির্দয় তুমি,তুমি
হৃদয়হীনা,হৃদয়হীনা
তুমি। তাইতো তুমি নিজের শুষ্কতাকে মেটাতে
পারোনি আজও।”
মরুভূমি
নির্দয় হাসি হেসে বললো,“হ্যাঁ
আমি নির্দয়,আমি
হৃদয়হীনা। আমি
এক ফোঁটা বারি বিন্দুকেই শুষে নিই নির্দয়ের মতো। আর তাই আমি মরুভূমি। আর তাই আমি হৃদয়হীনা। হৃদয়হীনা। হৃদয়হীনা।
কথা
গুলো মরুভূমির এক বিশাল বালি ঝড়ে পরিণত হয়ে ওই ব্যক্তিটিকে ঢাকা দিয়ে দিল সেই বিশাল
পুকুরের কেন্দ্র বিন্দুতে। অদৃশ্য হল পুকুর। মিটে গেল দীর্ঘ
দিনের প্রত্যাশা।
~ রূপক