Subscribe Us

header ads

শিক্ষানবীশ

দেরিতে পৌঁছানো ০৩:৩০ এর হাওড়া-মেদিনীপুর লোকাল তার সম্পূর্ন গতি কমানোর আগেই আমি ট্রেন থেকে নামতে বাধ্য হলাম।

ট্রেনের ভেতরে আর প্লাটফর্মে বসে থাকা লোকজনদের মধ্যে কেউ কেউ আমার এই কান্ড দেখে বকা ঝকা করতে লাগলো। কিন্তু আমি জানি, এমনিতেই দেরি তার উপর আমি যদি আরও একটু দেরি করে পৌঁছাই তবে আরও ভীষণ রকমের গালি আমার জন্যে অপেক্ষায় থাকবে। কারণটা আমার কাঁধে ঝোলানো ব্যাগটার মধ্যে রয়েছে।

আমি জানি এই ভাবে ট্রেন থেকে নামটা ঠিক নয়, এমন কি আগেও এমনটা কোনোদিনও করিনি। আমি জানি মুখ থুবড়ে পড়লে একত্রিশটা দাঁতের কিছু তো ভেঙে হাতে চলে আসবে, তবুও আমি তাড়াহুড়ো করছি, কারণ আমার হাতে সময় কম।

ঐতিহাসিক বিশাল মেদিনীপুরের বুকে স্বল্প জায়গায় জেগে ওঠা ঐতিহ্যপূর্ন মেদিনীপুর কলেজ ইতিহাসের পাতায় অগুনতি কালজয়ী ঘটনার সাক্ষী রেখে চলতে চলতে আজ এক-শত-পঞ্চাশ বছরে পা রেখেছে। সে ইতিহাসের চিহ্ন রেখে গেছে সবার রক্তে কিংবা একশো বছরের পুরোনো বাড়ির ইট কাঠে কিংবা কোনো খেলার মাঠ বা রেলওয়ে স্টেশনে। সত্যি খুব গর্ব হয় যে আমি এই মেদিনীপুর কলেজে পড়ি।

কিন্তু এখন ওসবের একটুও মুড নেই। আজকে কলেজে শেষ দিনের অনুষ্ঠান। আগের দিন গুলোতে আসতে পারিনি বাড়িতে বিশেষ একটা কাজে ফেঁসে যাওয়ার জন্যে। এক সপ্তাহ আগে নিখিলের কাছ থেকে ওর DSLR ক্যামেরাটা নিয়েছিলাম দরকার ছিল বলে। কিন্তু এখনো ওটা ফেরত দেওয়া হয়নি। তাই তেমন ভালো একটা ছবি তুলে উঠতে পারেনি সে এই কদিনে। সেই জন্যে ও আমার উপর ভীষণ রেগে আছে। আজ বিকাল তিনটার সময় ওর হাতে ক্যামেরাটা তুলে দেবো বলেছিলাম। কিন্তু এখন বাজে, হাত ঘড়িটা দেখতে দেখতে স্টেশনের গেট পেরিয়ে এলাম। ০৩টে বেজে ৩৮মিনিট।

স্টেশন রোডে দৌড়ে এসে অটো তে উঠতে যাবো ঠিক সেই সময়ে অটোটা ফস করে ছেড়ে গেল। অন্য সময় অটো ডাইভার গুলো ডেকে ডেকে নিজেদের যান ভর্তি করে। কিন্তু আজকে কি ব্যাপার, অটোর সংখ্যা এত কম কেন? একজনকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, অটো রিক্সা গুলো নাকি আজকে কোথায় ভাড়াতে গিয়েছে। কি ঝামেলা, দেখে শুনে আজকেই যেতে হলো।

বার বার ঘড়ি দেখছি আর ভাবছি কোনো বাইক আরোহী কিংবা সাইকেল আরোহীকে বললে যদি নিয়ে যেত তাহলে খুব ভালো হতো। কেউ আসছে কিনা দেখবো বলে যেই পেছন ঘুরেছি দেখি সামনে খানিক দূরে একটা পান দোকানের সামনে সম্পূর্ণ খালি একখানি টোটো দাঁড়িয়ে রয়েছে। উফ্, সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে টোটো টার দিকে এগিয়ে গেলাম।

কাছে গিয়ে চালককে জিজ্ঞাসা করলাম, “দাদা, ছাড়বে কখন?”

টোটো চালক নিজের জায়গাতে বেশ আরাম করে বসে এক মনে উল্টো দিকের একটা খাওয়ার দোকানের দিকে তাকিয়েছিল। আমার কথা শুনে চটকা ভেঙে খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকার পর বলল, “না ভাই এটা বুক হয়ে গেছে।”

“বুক হয়ে গেছে মানে?” অবাক হয়ে আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

“হ্যাঁ, ওই যে বয়স্ক দাদুটা আসছেন না, উনিই বুক করেছেন।”

আমি রাস্তার উল্টো দিকে তাকিয়ে দেখি সত্যিই একজন বয়স্ক লোক রাস্তা পেরিয়ে টোটোর দিকে এগিয়ে আসছে। আমি টোটো ডাইভার কে একটু জোর গলায় বললাম, “আচ্ছা বেশ ওই বুড়ো লোকটা যাচ্ছে যাক, আমিও যাবো।”

টোটো ডাইভার কোনো ভনিতা না করে সোজা-সাপ্টা উত্তর দিল, “ওনার সঙ্গে আরও কয়েকজন রয়েছেন, জায়গা হবে না। তুমি অন্য রাস্তা দেখো।”

“আরে অন্য রাস্তা..., কি ঝামেলা।” আসে পাশে যাওয়ার জন্যে আর কোনো গাড়ি দেখতে না পেয়ে আমি টোটো চালকের সঙ্গে ধুন্ধুমার ঝগড়া শুরু করে দিলাম।

বয়স্ক লোকটি ততক্ষনে রাস্তা পেরিয়ে টোটোর কাছে এসে দাঁড়িয়েছে এবং কিছুক্ষনের মধ্যেই আমাদের ঝগড়ার কারণটাও বুঝে গেছে। বয়স্ক লোকটি আমাকে থামিয়ে টোটো চালকের পানে তাকিয়ে বলল, “আচ্ছা বেশ আর ঝগড়া নয় ও না হয় আমাদের সঙ্গেই যাবে। ঝগড়া করে সবকিছুর সমাধান করা যায় না।” এরপর আর কিছু কথা বলা চলে না তাই ডাইভার চুপ করলো, সেই সঙ্গে আমিও মুখ বন্ধ করলাম।

পাক্কা কুড়ি মিনিট পর টোটো ছাড়লো। হেঁটে হেঁটে চলে গেলে বোধ করি এতক্ষনে পৌঁছে যেতাম। টেনশানে বার বার হাত ঘড়িটার দিকে চোখ যাচ্ছে। ৪টা বেজেছে।

কিছুক্ষন যাওয়ার পর ঠিক বাস স্ট্যান্ডের কাছে টোটো দাঁড়িয়ে পড়লো। উফ্ আবার দাঁড়িয়ে পড়লো কেন? দেখি একজন বয়স্ক মহিলা এসে টোটোর পেছনের সিটে বসল। তারপর হর্ন বাজিয়ে টোটো আবার চলতে শুরু করলো।

আমি সামনে চালকের কাছে বসেছিলাম। পেছনে চারজন বসেছিল, তিনজন বয়স্ক লোক ও একজন বয়স্ক মহিলা। সবারই বয়স প্রায় সত্তরের উপরে হবে। একজনের মাথায় কাশফুলের মতো সাদা ধবধবে চুল আর একজনের মাথা ভর্তি টাক বাকি একজনের সাদা-কালো চুলের বাহার সঙ্গে মহিলাটিরও। সবাই বেশ জমকালো পোশাক পরিহত। বোধ হয় কোনো বিয়ে বাড়ি-টাড়ি আছে।

এ পর্যন্ত লিখিল আমাকে পাঁচবার ফোন করেছে। আমি একবারও ধরিনি। এখন দেখি একটা মেসেজ পাঠিয়েছে নিখিল। নাহ্, এবার একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে ভেবে আমি কল করলাম।

আমি হ্যালো বলবার আগেই লিখিলের রাগী কণ্ঠস্বর ভেসে এল, “ফোন করছি ধরছিস না কেন? কটার সময় আসার কথা ছিল তোর? সন্ধ্যা হয়ে গেলে আসবি নাকি?”

আমি স্বাভাবিক স্বরেই বললাম, “আরে এই তো কলেজ গেটের সামনেই টোটো থেকে নামছি।”

“আমি কলেজ গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি।” নিখিল বলল।

“আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি, ফোন রাখ।” তাড়াতাড়ি বলেই আমি ফোনটা কেটে দিলাম।

টোটো চালকের দিকে একবার তাকিয়ে বললাম, “আরে এত আস্তে চালালে হবে, দেরি হয়ে যাচ্ছে তো নাকি।”

টোটো চালক আমার দিকে না ফিরেই বলল, “পেছনে চারজন বয়স্ক মানুষ বসে রয়েছেন। শুধু তোমার কথা ভেবে তো আর জোরে চালাতে পারি না।”

“ধুর যতসব বুড়োবুড়ি গুলো এখানেই জুটেছে।” বলে আমি সামনের দিকে তাকিয়েছি হঠাৎ আমার মোবাইলটা বেজে উঠল। আন নোন নাম্বার। কলটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরলাম।

ওদিক থেকে একজন মহিলার কণ্ঠস্বর ভেসে এল, “হ্যালো সুজয় কেমন আছিস?”

“আমি কোনো সুজয়-টুজয় নই। রং নাম্বার।”

“এটা কোন জায়গা ?”

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, “আরে বললাম তো রং নাম্বার, কানে শোনা যায়নি নাকি।”

“তুই সবিতার ছেলে সুজয় তো নাকি?”

আমার মাথায় খুন চেপে গেল। এমনিতে দেরি হচ্ছে পৌঁছাতে, তার উপর কানের কাছে আর একজন ঘ্যানঘ্যান করা শুরু করেছে। আমার মুখ দিয়ে অশ্লীল অশ্রাব্য ভাষায় দু-চার কথা বেরিয়ে গেল।

আমার কথা শুনে মহিলাটি কাঁদু কাঁদু স্বরে বলল, “কেমন ছেলে তুমি। তোমাকে তোমার বাড়ির লোকজন শেখায়নি একজন মহিলার সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয়।” বলেই ফোনটা কেটে দিল।


কলেজ গেটের সামনে টোটো পৌঁছাতেই কোনো রকমে নেমে ভাড়া চুকিয়ে ভেতরে ঢুকবো বলে দৌড়ে গেলাম গেটের দিকে। দেখি ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে নিখিল। ব্যাগের ভেতর থেকে ক্যামেরাটা বের করে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

“এতক্ষনে আসার সময় হলো। টাইম সম্পর্কে একটুও জ্ঞান নেই তোর। কাউকে কিছু কথা দিয়ে, সেটা একটু পালন করারও একটু চেষ্টা কর। কবে যে তুই শুধরাবি জানিনা।” আর তেমন কিছু বলল না লিখিল। ভেবেছিলাম অনেক কিছু কথা শোনাবে হয়তো। এসব কথা তো শুনে শুনে গা সোয়া হয়ে গেছে।

ভেতরে ঢুকতেই চোখে চমক লাগলো। একি আমাদের কলেজ, চেনাই যাচ্ছে না। হবেই তো, দেড়শো বছর পূর্তি বলে কথা। চারদিকে ঘুরে ঘুরে যতই দেখছি ততই চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যাচ্ছে।

সোয়া এক ঘন্টা এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করতে করতে সন্ধ্যে নামলো। সন্ধ্যার দৃশ্য আরও চোখ ধাঁধানো। চারদিকে রকমারি আলোয় আলোকিত কলেজ বিল্ডিং গুলো যেন বিশাল বিশাল প্রহরীর ন্যায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। সন্ধ্যা হতেই একটু একটু ভিড় বাড়তে শুরু করেছে।

শীত কালের সন্ধ্যে। হালকা শীত করছে বুঝতে পেরে ব্যাগ থেকে শায়টারটা বের করে পরছি, ঠিক তখনি পেছন থেকে আমার নাম ধরে কেউ একজন ডাকতে পেছন ফিরে তাকালাম। দেখি অভীক আসছে আমাকে দেখতে পেয়ে। অভীক আমাদের সঙ্গে পড়ে। খুব ভালো ছেলে আর খুব ভালো বন্ধুও বটে। কাছে আসতে বলল, “কিরে এলি কখন?”

“অনেকক্ষণ হলো, তুই?”

“এইতো মিনিট পাঁচেক। চল দাদুর সঙ্গে দেখা করবি।”

“দাদু?”

“হ্যাঁ তোকে বলেছিলাম না একবার; আমার দাদু এই কলেজের প্রফেসার ছিলেন। দাদুকে তোর কথা বলতে দাদু বলল কই নিয়ে আয় দেখি তোর বন্ধুটি কেমন।”

শয়টারের কলারটা ঠিক করে নিয়ে বললাম, “আচ্ছা চল।”

কলেজ অফিসের ঠিক সামনে বসবার জন্য মোটা মোটা গাছের চারপাশে গোল করে বাঁধানো পাকার চাতাল তৈরি করা ছিল। অনেক ছেলে মেয়ে এমনকি অনেক বয়স্ক লোকেরাও ওখানে বসেছিল। তাদের মধ্যে আমি কয়েক জনকে চিনতে পারলাম। এরা তারাই যারা বিকেলে আমার সঙ্গে একই টোটো তে এসেছিল।

অভীককে দেখলাম এক-পা দু-পা করে সেই দিকেই নিয়ে যাচ্ছে আমায়। আমি ওর হাত খামচে ধরে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললাম, “তোর দাদুটি কে বলতো আগে আমায়।”

দেখলাম বিকালে টোটো ডাইভারের সঙ্গে ঝগড়ার সময় যে বয়স্ক লোকটি ঝগড়া থামিয়েছিল, অভীক তার দিকেই আঙ্গুল দেখাচ্ছে। আঙ্গুল দেখানো মাত্রই মনে পড়ে গেল আসবার সময় আমার মুখ দিয়ে বেরানো কথা গুলো। যেগুলো মোটেও একটা কলেজ পড়ুয়ার মুখে মানায় না।

আমি ফট করে পেছনে ঘুরে বললাম, “বাদ দে ছাড় পরে না হয় দেখা করে নেবো। চল ওদিক থেকে ঘুরে আসি।”

অভীক আমার কোনো কথা শুনলো না। ঠিক টেনে নিয়ে গেল ওর দাদুর সামনে। আমার মুখ নিচের দিকে। অভীক তার দাদুকে ডেকে বলল, “দাদু তোমায় বলেছিলাম না আমার বন্ধুর কথা। এই সেই বন্ধু।”

কিছুক্ষন চুপচাপ। বোধ হয় অভীকের দাদু আমায় ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিচ্ছিল। খানিক পরে বলল, “এই ছেলেটা?”

অভীক বলল, “হ্যাঁ দাদু খুব ভালো ছেলে আর খুব কাজের ছেলে।”

“হ্যাঁ তার নিদর্শন তো বিকেলেই পেয়ে গেছি। তা তোমার মুখ নিচের দিকে কেন? লজ্জা লাগছে বুঝি। অভীক তুই যা একটু ওদিক থেকে ঘুরে আয়, ততক্ষনে আমি তোর বন্ধুর সঙ্গে একটু কথা বলি।”

“আচ্ছা দাদু।” বলে অভীক চলে গেল।

অভীকের দাদু আমার ডান হাতটা ধরে টেনে বসিয়ে দিল তার কাছে। দুদিকে দুজন বয়স্ক মানুষ তাদের মাঝখানে আমি। সবাই বলছে আর আমি মুখ শুকনো করে মাথা নিচু করে শুনছি।

“এখন আর লজ্জা পেয়ে কি হবে। লজ্জা পাওয়া তো তখন উচিত ছিল যখন নিজের মাতৃ সমান একজন মহিলাকে ওইরকম নিচু ভাষায় গালি দিচ্ছিলে। লজ্জা তখন পাওয়া উচিত ছিল যখন নিজের বড়ো দাদার সমান টোটো চালকের সঙ্গে খারাপ ব্যাবহার করছিলে।”

আর একজন বলল, “এমন কি আমাদের সামনেই আমাদেরকে, ধুর যত সব বুড়ো বুড়ি গুলো এখানেই জুটেছে বলতেও দ্বিধান্বিত হয়নি, তাহলেই ভাবুন।”

তৃতীয় আর একজন বলল, “ছিঃ ছিঃ এই ছেলেটা আমাদের কলেজে পড়ে সেটা ভাবতেই কিরকম লাগছে।”

সেই টোটো তে যে বয়স্ক মহিলাটি এসেছিল তাকেও সেখানে বসে থাকতে দেখেছিলাম। সবার কথা শুনে মহিলাটি বলল, “আপনারা তখন থেকে যেভাবে ছেলেটাকে নাস্তানাবুদ করে তুলেছেন তাতে তো ও একেবারে ভড়কে গিয়েছে। এবার তো ওকে রেহাই দিন।”

মহিলাটি আমাকে তার কাছে ডেকে বসালো। স্নেহ ভরে একহাতে আমায় পরিবেষ্ঠিত করলো। অনেক ছোটবেলায় আমি আমার মা কে হারিয়েছিলাম। এখন এই মহিলার পরিবেষ্টন আমাকে আমার মায়ের কথা মনে করিয়ে দিল।

তারপর তিনি আমায় একে একে আমার নাম, পরিচয়, কোন বিষয়ে কোন ইয়ারে পড়াশোনা করছি সব জিজ্ঞাসা করলেন। আমিও একে একে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিলাম।

তিনি আমার সব কথা শুনলেন তারপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “তুমি জানো স্বামীজির এই মহৎ বাণী টা।

আমি উনার মুখের দিকে তাকালাম।

তিনি বলতে নাগলেন, “টাকায় কিছু হয় না, নামেও না, যশেও না, বিদ্যায়ও না। ভালোবাসায় সব হয়। চরিত্রই বাধা বিঘ্নের বজ্র দৃঢ় প্রাচীরের মধ্য দিয়ে পথ করে নিতে পারে।”

আমি উনার কথা মন দিয়ে শুনছিলাম। পাশ থেকে বাকিদের কথা গুলো অস্পষ্ট শোনাচ্ছিল। আমার মন পড়েছিল উনার বলা কথা গুলোর উপর।

উনি বলছিলেন, “তিন বছর পর তুমি ডিগ্রি নিয়ে এই কলেজ থেকে বেরিয়ে যাবে। উচ্চতর শিক্ষার জন্য নামি দামি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে। তোমার নামের পেছনে ডিগ্রির পর ডিগ্রি জুড়তে থাকবে। কিন্তু এর পরেও যদি তুমি মানুষের মতো মানুষ না হয়ে উঠতে পারো তাহলে ওই সব ডিগ্রি গুলোর কোনো গুরুত্বই থাকবে না। কারণ ওগুলো কখনোই তোমার উচ্চতর চরিত্রের চিহ্ন পদর্শন করবে না। ওটা সম্পূর্নই তোমার নিজের উপর নির্ভর করছে তুমি নিজেকে কিভাবে তৈরি করবে।

তিনি আমাকে আরও অনেক কথা বললেন যেসব এর আগে আমায় কেউ কোনো দিনও বলেনি। কি জানি ভগবান হয়তো এই দিনটার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। পরবর্তী কালে ওনার বলা প্রতিটা কথা আমার জীবনে ভীষণ ভাবে প্রভাব ফেলেছিল।

সেদিন আমি আর ওখানে থাকিনি, সন্ধ্যার ট্রেন ধরেই বাড়ি চলে এসেছিলাম। আসতে আসতে ভাবছিলাম, “একদিন আমাদেরও বয়স হবে, মাথার চুল সাদা হবে, টানটান করা চামড়ায় ভাঁজ পড়বে। পঞ্চাশ বছর পর এই কলেজ দুশো বছরে পা দেবে। সেদিন আমার বয়স হবে প্রায় সত্তর। সেদিন যদি বুড়ো শরীরটাকে টেনে নিয়ে প্রাক্তনী হয়ে এই কলেজে আসি। আর আসবার পথে কোনো উনিশ বছরের ছেলে যদি আমার সামনে আজকের মতো একই ব্যাবহার করে তবে সেদিন আমি তাকে কি শিক্ষা দেব?”