Subscribe Us

header ads

লোনের টাকা

 


জুন মাসের মাঝামাঝি সময় অর্থাৎ, বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আষাঢ় মাসের প্রথম সপ্তাহ। মানে হলো গিয়ে বর্ষা কালের শুরু কিন্তু বর্ষা কালের শুরু হলে কি হবে এখনো পর্যন্ত বর্ষার কালো মেঘের আনাগোনা দৃষ্টি গোচর হয়নি কিংবা ঠাণ্ডা বৃষ্টি ফোঁটার পতনে ভেজা মাটির সুগন্ধ নাকে আসেনি এখন আবহাওয়ার খুব পরিবর্তন হয়েছে, আগের মতো সময় করে আর বর্ষা আসে না শুধু বর্ষা কেন, কোনো ঋতুই তার সময় মতো আসে না। সবাই যেন কেমন দেরিতে দেরিতে আসে যেন খরগোশের মতো মাঝ রাস্তায় কিছুটা ঘুম দিয়ে তারপর আবার যাত্রা শুরু করে

পলাশের কাছে একদিন এই কথাটা পাড়তে সে বললো, “ওটা কোনো ঋতুর দোষ নয় বুঝলে। দোষটা এই আধুনিকতার। কেউ যদি তোমায় ভালোবাসে তুমি নিশ্চই তাকে আঘাত করতে চাইবে না কিন্তু কেউ যদি তোমায় আঘাত করে তুমি নিশ্চই চুপচাপ বসে থাকবে না, উল্টে শোধ নেওয়ার লক্ষ্যে কোনো না কোনো ফন্দি ফিকির বার করবে। কি তাই তো

আমি চুপ চাপ দেখে সে বলল,নীরবতা সম্মতির লক্ষণ প্রকৃতি আমাদের উপর এইভাবেই শোধ নিয়ে  থাকে, বুঝলে আসলে ওটাকে ঠিক শোধ নেওয়া বলা চলে না আমরা তার উপর যে ক্ষত সৃষ্টি করি সেটা সে নিজের মতো করে মেরামত করে নেয় ওতে কার উপর কতটা ভালো কিংবা খারাপ প্রভাব পড়লো তাতে প্রকৃতির কোনো আসে যায় না।”

আমি বুঝলাম প্রকৃতি প্রেমিক পলাশের কাছে এ বিষয়ে বেশি তর্ক করে টিকতে পারবো না। তাছাড়া কথাটা এতটাও ভুল বলেনি ওযেভাবে চতুর্দিকে পলিউশন বাড়ছে তাতে বোধ করি মানব জাতি এ ধরাধামে আর বেশি দিন নয়। একদিন হয়তো এমন হলো, পেছনে অক্সিজেন সিলিন্ডার ঝুলিয়ে রবীন্দ্রসদন থেকে পার্ক স্ট্রিটে যাওয়ার বাসে উঠছিকিংবা এমন হলো, আমাদের প্রিয় কলকাতা শহরটাই নোনা জলের তলায় হারিয়ে গেল কিংবা ..., যাক গে ওসব কথা আসল কথায় আসি

কলকাতায় মাসির বাড়িতে মানে পলাশের বাড়িতে এসছি দুদিন হলো। পলাশ বলেছিল এখান থেকে রায়পুরে মামার বাড়িতে যাবে; সেখানে দু একদিন কাটিয়ে মেদিনীপুরে আমাদের বাড়ি মানে পলাশের মাসির বাড়ি যাবে।  আর সেখান থেকে কালিম্পং ডানসং ফরেস্টের বাংলো বাড়িতে

পলাশের মা আর আমার মা সহোদর অর্থাৎ, আমার মায়ের চাইতে পলাশের মা দু বছরের বড়ো আর পলাশ আমার চেয়ে মাত্র নয় দিনের বড়ো তবুও আমাদের মধ্যে তুই তোকারি টা কখনোই হয় না। এর পেছনে অবশ্য একটা কারন রয়েছে। কারণ টা না হয় অন্য কোনো সময়ে বলবো মোট কথা পলাশ আমার চেয়ে পড়াশোনাতে খেলাধুলাতে অনেক এগিয়ে; আর সেই কারণে সবাই ওকে একটু বেশি স্নেহ করে। এমন কি আমার মা আর বাবাও ঠিক তেমনই পলাশও আমায় একজন বন্ধু ও ভাইয়ের মতোই ভালোবাসে

অসহ্য গরম আজকে সবে মাত্র ৯টা বেজেছে কিন্তু বাইরে যা রোদ তাতে কিছুক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলে মাথার চাঁদি ফেটে যাওয়ার জোগাড় হয়বাড়ির ভেতর বসে আছি আর মাথার উপরে ফ্যান টা চলছে ওতেই যা একটু স্বস্তি।

কালিম্পং ডানসং ফরেস্টের বাংলো বাড়িতে থাকা কালীন পলাশের ল্যাপটপ টা গন্ডগোল করছিল। প্রোগ্রামিং এর কি একটা নতুন ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরী করছিল, যেটা দিয়ে নাকি নাসার মতো এতো বড়ো একটা সার্ভারকে হ্যাক করা যাবে। পৃথিবীর সমস্ত মানুষের সব তথ্য নাকি ওর হাতের মুঠোয় হবে। আমি ওসব এত বুঝি না সব মাথার ওপর দিয়ে যায়মাঝে মধ্যে পলাশ একটু বোঝানোর চেষ্টা করলে খুব কষ্ট করে একটু বুঝে নিতে হয়, না হলে লিখবো কি করে

পলাশ বলে, আজকালকার ইন্টারনেটের যুগে ডাটা জিনিসটা যে কতটা দামি সেটা তোমায় বলে বোঝাতে পারবো না বড়ো বড়ো কোম্পানি গুলো ইন্টারনেট থেকে পাবলিকের ডাটা গুলোকে কাজে লাগিয়ে কোটি কোটি টাকা রোজগার করছে তুমি শুনলে অবাক হবে, কিছু কিছু ইন্টারনেট জগতের বাজে লোক আছে যারা এই সব তথ্য গুলোতে চুরি করে সাধারণ মানুষের প্রাইভেসি কে নষ্ট করে ব্ল্যাক মেইল করে তাদের কাছে মোটা অংকের অর্থ চায়। আমি এইসব সাধারণ নিরুপায় লোকেদের কথা ভেবেই এই ল্যাঙ্গুয়েজ টা তৈরি করছি। তাছাড়া এটা দিয়ে আরও অনেক অনেক কিছু কাজ করা যাবে যেসব তোমায় বললে বুঝবে না।

নিশ্চই ভালো কিছু হবে।পলাশ শুধু হেসেছিল।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, এর কিছুদিন পর ল্যাপটপটা খারাপ হয়ে গেল কালিম্পং তেমন ভালো ল্যাপটপ সারানোর দোকান নেই, সেই কারণে কলকাতায় আসা। আর সেই অছেলায় রথ দেখা কলা বেচার মতোই ঘোরা ফেরা টা ও একটু হয়ে যাবে ভেবে মনটা খুশিতে নেচে উঠেছিল

পলাশ বেরিয়েছে কিছুক্ষণ হলো নিজের ল্যাপটপটা সারাতে দিয়েছিল ওটাই আনতে গিয়েছে। যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না কিন্তু কি আর করবে দরকারের জিনিস তাই বাধ্য হয়েই বেরিয়েছে এই টাঁক ফাটা রোদে

আমি এতক্ষন খাটের উপর এক কোনে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে খবরের কাগজটা পড়ছিলাম। মনের মতো খবর না পেয়ে বিরক্ত হয়ে অযত্নে একদিকে ওটাকে ফেলে দিয়ে খাট থেকে নেমে এলাম। মোবাইলটা চার্জে দেওয়া ছিল। গিয়ে দেখলাম নটা তেরো বেজেছে। মোবাইল এখনো ফুল চার্জ হয়নি টেবিলে ক্যামেরাটা রাখা ছিলওটা নিয়ে আবার বিছানায় উঠে বসলাম। দুদিন আগে কালিম্পং-এ তোলা ছবি গুলো কাল সন্ধায় আমি আর পলাশ একসঙ্গে দেখছিলাম। কিছু ছবি দেখতে বাকি ছিল, ওগুলোই দেখতে লাগলাম

কতটা সময় কেটে গেছে জানি না। হঠাৎ নিচে মাসির সঙ্গে কেউ পলাশের ব্যাপারে কথা বলছে শুনে ক্যামেরা থেকে মনোযোগ সরালাম। একটা ছেলে, মাসি কে পলাশের ব্যাপারে কি একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে মাসি বলছে, “পলাশ তো কিছুক্ষন হলো বেরিয়েছে। কোথায় গিয়েছে তেমন তো কিছু বলে যায়নি আমাকে। তুমি বরং উপরে চলে যাও, পলাশের ভাই রয়েছে ওখানে…।”

“কে এসছে মাসি ?“ আমি উঠে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। এখান থেকে মাসি কিংবা আগন্তুক কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। শুধু শুনতে পেলাম মাসি বলছে, “পলাশের সঙ্গে কেউ একজন দেখা করতে এসেছে।”

“আচ্ছা উপরে পলাশের রুমে আসতে বলো।”

“যাও উপরে চলে যাও।”


“কে গো ? ও ব্যাংক ম্যানেজারের ছেলে। পলাশের কাছে এসছে নাকি?

“হ্যাঁ পলাশের কাছে এসছে। কিন্তু তুমি এখনো বেরোয়নি কেন, ১০টা ২০ বাজে।”

“এই তো হয়ে গেল।”

“সে তো তুমি প্রতিদিনই বলো, তারপর ঠিক দেরি করে বেরাও। কে যে তোমাকে স্কুলের হেড মাস্টার বানিয়েছে, ভগবানই জানে।”

“শুধু ভগবান নয়, আরেকজন ও জানে। সে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে শ্রীযুক্ত সমরেশ রায় চৌধুরী। হা হা হা হা…।”

মাসি আর মেসোর এই সব কথা শুনে আমি মনে মনে হাসছি তখনি দেখি, সিঁড়িতে জুতো হীন পায়ের অস্পষ্ট খসখস শব্দ তুলে একটি ছেলে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। ছেলেটার বয়স আঠেরো কি উনিশ হবে। ফর্সা রোগা শরীরটার উপর টাইট করা প্যান্ট আর টিশার্ট থাকায় আরো বেশি রোগা লাগছে। বাদামি চুল গুলো অদ্ভুত রকম কাটিং করা, দেখলেই হাসি পায়। আমাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে বলল, “পলাশ দা কোথায় গেছে বলো তো ? ভীষণ দরকার ছিল।”

“পলাশ তো একটু বেরিয়েছে, চলে আসবে একটু পর। তুমি এখানে এই চেয়ার টা তে এসে বসো। ঘেমে গেছো পুরো, দাঁড়াও ফ্যানের স্পিডটা একটু বাড়িয়ে দিই।”

আমি বোর্ডের কাছে গিয়ে রেগুলেটর ঘুরিয়ে ফ্যানের স্পিড বাড়িয়ে দিলাম। অতিরিক্ত হাওয়া পেয়ে খুলে রাখা দরজাটা ক্যাঁচ শব্দ করে ভেজিয়ে গেল। মোবাইলটা চার্জ থেকে খুলে দেখি সাড়ে দশটা বাজতে যায়। 

“কতক্ষন হলো পলাশ দা বেরিয়েছে বলো তো সুকুমার দা।” ছেলেটা আরও অধৈর্য্য হয়ে জানতে চাইল।

“তা ঘণ্টা খানেক তো হবেই।” কথাটা বলতে বলতে আমি খাটের উপর পা ঝুলিয়ে বসলাম।

ছেলেটা কপালে আগুল ঘষতে ঘষতে বিরক্তের ভঙ্গিতে চুক করে শব্দ করল। এদিকে আমার মনে কিন্তু সেই কখন থেকে একটা প্রশ্ন ঘুরছে। চেনা নেই, জানা নেই ছেলেটা হঠাৎ আমাকে দাদা বলে কেন ডাকা শুরু করলো। তবে কি আমায় চেনে নাকি ছেলেটা। আমারও কেমন জানি মুখটা চেনা চেনা ঠেকছে, কোথায় যেন দেখেছি। আমি আর থাকতে না পেরে মনের ভেতরে থাকা প্রশ্নটা উগরে দিলাম

“আচ্ছা তুমি কি আমায় চেনো নাকি ? না মানে…।

এর পরের কথাটা কি বলবো সেটা ভেবে ইতস্তত বোধ করছি তখন দেখি ছেলেটা কপাল থেকে হাত সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল, “এটা কিরকম কথা হলো সুকুমার দা। তোমাকে চেনে না এ কলকাতায় এমন কেউ আছে নাকি ?

“এহে এটা একটু বেশি হয়ে গেল না।

“না সত্যি বলছি। পলাশ দা কে নিয়ে তুমি যে সব কাহিনী গুলো লিখেছো, বিশেষ করে ওই 'শিব লিঙ্গের আড়ালে’ ওইটা পড়বার পরই তো জানতে পারি যে পলাশ দা হ্যাকিং জানে। তাছাড়া 'WhatsApp Scam’ , ডানসং ফরেস্ট এর চোরা শিকারীদের নিয়ে একটা গল্প, কি যেন নামটা ছিল মনে পড়ছে না

“ডানসং-এর 

“হ্যাঁ ওইটা, এ সবই তো আমার পড়া। আর তোমার আঁকা অনেক ছবিও দেখেছি, এক কথায় অসাধারণ।

অন্যের মুখে নিজের প্রশংসা শুনলে কতটাই যে ভালো লাগে সেটা যে শুনেছে সেই জানে। এদিকে ভেতরে ভেতরে একটা অহংকারের সাপ ফণা তুলছে বুঝতে পেরে নিজেকে সামলে নিলাম। হেসে বললাম, “ছাড়ো ওসব কথা।

এরপর একটু সিরিয়াস হয়ে বললাম, “ও হো, এই দেখো, কথায় কথায় তোমার নামটাই জিজ্ঞাসা করা হয়নি।

“কৃষ্ণেন্দু অধিকারী।

“থাকো কোথায় ?

“এই তো সামনেই, পলাশ দার বাড়ি থেকে চারটা বাড়ির পর নীল রঙের যে দোতলা বাড়ি টা রয়েছে ওইটা।”

“ও তাই বলো সেই জন্য এত চেনা চেনা লাগছে। পলাশের বাড়িতে যখন আসতাম তোমাকে দেখেছি অনেকবার কিন্তু ঠিক মনে পড়ছিল না। আসলে অনেক দিন আগের ব্যাপার তো, তা প্রায় আজ ছয় সাত বছর হতে চললো

“তখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। আমার এখনো মনে আছে তখন তুমি সপ্তাহে রবিবার করে পলাশ দার বাড়িতে আসতে আমাদের বাড়ীর সামনে দিয়েই। অনেক বার দেখেছি তোমায়।

“হ্যাঁ ওই চার বছর…।”

এই সময় হঠাৎ দরজা ঠেলার শব্দ পেয়ে দুজনেই দরজার দিকে চোখ তুলে তাকালাম। দেখি পলাশ ভেজানো দরজা ঠেলে ভেতরে আসছে।

“ওই তো পলাশ এসে গেছে।”

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই দেখি ছেলেটা চেয়ার ছেড়ে প্রায় দৌড়েই পলাশের কাছে ছুটে গেল। 

“পলাশদা ভীষণ কেলো হয়ে গেছে। তুমিই পারো আমাকে এ ঝঞ্ঝাট থেকে বাঁচাতে।”

পলাশ রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল, “উফ্ বাইরে যা গরম। মায়ের কাছে শুনলাম তুই নাকি কি একটা দরকারে এসছিস।”

“হ্যাঁ ওই…।”

“তুই একটু খানি বস আমি হাত মুখ ধুয়ে আসি, এসে তোর সব কথা শুনছি।”

পলাশ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ছেলেটা ফিরে এসে চেয়ারে না বসে সোফাতে বসল। আমি যেরকম আগে বসেছিলাম সেই রকমই বসে রইলাম।


প্রায় মিনিট পাঁচেক পর পলাশ হাত মুখ ধুয়ে মুছে ঘরে এলো। দরজা টাকে অভদ্রের মতো পেছন দিক থেকে লাথি মেরে ভেজিয়ে দিয়ে ঘরের ভেতরে আসতে আসতে বলল, “সত্যি যা গরম পড়েছে, উফ্। রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছি আর ভাবছি, আজকে বোধ হয় এই গরমে অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে মরেই গেলাম।”

“ধুর, যতসব উল্টো পাল্টা চিন্তা ভাবনা। আর তোমার মতন জোয়ান ছেলে যদি এই সব ভাবে তবে বুড়ো বুড়ি গুলো কি করবে।”

“না সত্যি এই গরমে বুড়ো বুড়িদের একদম বাড়ির বাইরে বেরাতে দেওয়া ঠিক না।”

ছেলেটা এতক্ষন আমার দুজনের দিকে দৃষ্টি পরিবর্তন করে তাকাচ্ছিল। এখন হঠাৎ একটু খানি বিরক্ত হয়ে আমাদের কথার মাঝে বলে উঠল, “পলাশদা যেটা বলছিলাম।”

“ও হ্যাঁ বল বল কি সমস্যা বল।”

ছেলেটা বলা শুরু করতে যাবে আর আমিও তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে যাবো ঠিক তখনই পলাশ আবার বলে উঠল, “সুকুমার একটু কষ্ট করে উঠে গিয়ে ফ্যানের স্পিডটা বাড়িয়ে দাও না গো।”

“ফ্যানের স্পিড ফুল করা আছে আর কি বাড়াবো।”

“না ফুল নেই, একটু কম আছে। বাড়িয়ে দাও।”

“আরে আমি একটু আগেই রেগুলেটর টা পুরো ঘুরিয়ে দিয়ে এসেছি।”

“একবার গিয়ে দেখই না।”

“ধুর।” বিরক্ত হয়ে আমি বিছানা থেকে নামলাম। “যদি পুরোটা ঘোরানো থাকে তবে কিন্তু ফ্যানের সুইচটাই বন্ধ করে দেবো আমি।”

পলাশ আমার দিকে তাকিয়ে শুধু নিঃশব্দে হাসলো। আমি রেগুলেটরে হাত দিয়ে ঘোরানোর চেষ্টা করতে বুঝলাম, সত্যি তো রেগুলেটর টা আর একটু ঘুরছে। পলাশের দিকে তাকাতে, “কি, আমি জানলাম কি করে তাইতো।”

“হ্যাঁ।”

“আমার বাড়ি, আমার রুম, আমি যে জানবো এটাই তো স্বাভাবিক।”

খাটের উপর এসে আগের মতো বসে বললাম, “হ্যাঁ, কিন্তু ঘরে ঢোকবার সময় একবারও তো তোমাকে বোর্ডের দিকে তাকাতে দেখলাম না।”

“প্রথমে যখন ঢুকেছিলাম ঘরে তখন তাকিয়েছিলাম।”

“তার পরেও তো আমি উঠে গিয়ে বাড়িয়ে দিয়ে আসতে পারি।”

“সেটা করোনি, কারণ তা করলে তোমার পিছনে যে খবরের কাগজটা যেভাবে রেখেছো তাতে তার প্রথম পাতা খুলে যাওয়া উচিত ছিল। দেখো সেটা এখন হচ্ছে একটু আগে পর্যন্ত কিন্তু হচ্ছিল না।”

“আচ্ছা তাহলে এইভাবে।”

পলাশ এবার ছেলেটার দিকে তাকাল। ছেলেটা নিশ্চই খুবই বিরক্ত হয়েছে। কারণ এ পর্যন্ত তার একটা কথাও শোনা হয়নি। 

“বুঝতেই পারছি তুই অনেকটা বিরক্ত হয়েছিস। বাট এখন আর তোর কথা বলার মাঝে বিরক্ত করবো না, বল, শুরু কর।”

ছেলেটা সঙ্গে সঙ্গে কিছু না বলে কিছুক্ষন চুপ থাকল তারপর দশ সেকেন্ড যখন কেটে গেল তখন একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলা শুরু করলো তার কথা, “তুমি তো জানই মনে হয় যে আমি এই সবে মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি এখনো আঠেরো বছর পূর্ণ হয়নি।

হ্যাঁ সে তো জানি। তা কি সাবজেক্ট নিলি ?”

“BCA”

বাহ্ খুব ভালো, আচ্ছা তারপর বল।

আসলে ইদানিং আমার বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন ছিল। তাই ভাবছিলাম যে ব্যাংক থেকে লোন নেবো।

কিন্তু তোর তো এখনো আঠারো পূর্ণ হয়নি একুশ না হলে তো ব্যাংক লোন দেয় না।

হ্যাঁ সেটা আমি জানতাম। তাই বাপি কে বলেছিলাম লোন নেওয়ার কথা। বাপি লোনও নিয়েছিল। আর সে টাকা আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েও দিয়েছিল। কিন্তু পুরোটা একসঙ্গে নয় অর্ধেক অর্ধেক করে প্রথমবার অর্ধেক টাকা তুললে পরের বার বাকি অর্ধেক টাকা পাঠিয়ে দেবে বলেছিল বাপি

পলাশ কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আমি বলে উঠলাম, “হ্যাঁ এতে সমস্যা কোথায় ? তোমার বাবা তোমায় বাবা বাকি অর্ধেক টাকা পাঠায়নি ?”

আমার কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পলাশ তার মনের ভাব প্রকাশ করল,হুম্ সেটাই।

না, আসলে টাকা পাঠানোয় কোনো সমস্যা নেই। বাবা দুবারই যত টাকা পাঠানোর তত টাকাই পাঠিয়েছিল কিন্তু সমস্যা তো অন্য জায়গায়।

পলাশ একটু নড়েচড়ে বসে বলল,আচ্ছা দুবার মিলিয়ে মত কত টাকা ?”

দশ লাখ।

দশ লাখ।আমি গালে হাত আর কনুইটাকে উরুর উপর ভর দিয়ে এতক্ষন কথা শুনছিলাম। হঠাৎ ছেলেটার মুখে দশ লাখ শব্দটা শুনে উরু থেকে আমার কনুই পিছলে গেল। মুখটা হাঁ আর চোখটা বড়ো বড়ো করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলামএই ছেলেটা দশ লাখ টাকা লোন নিয়েছে এখন যার পড়বার সময় সে ছেলে এত টাকা লোন নিয়ে কি করবে ?

পলাশের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম ও আমার মতো এতটাও অবাক হয়নি যতটা আমি হয়েছি। আরও বুঝলাম, আমার মনে যে প্রশ্নটা এসেছে সেটা পলাশও ভাবছে। বলল,

      

 ...