“নাইন ওয়ান।”
“নাইন এইট।”
“নাইন ওয়ান।”
“আচ্ছা নাইন ওয়ান, এরপর ?”
“এক শূন্য।”
“শুনতে পাচ্ছি না, একটু জোরে বলো।”
“এক শূন্য।”
“এরপর ষোলো।”
“হ্যাঁ।”
“আচ্ছা ঠিক আছে আমি সব জিজ্ঞাসা করে নিচ্ছি।”
তুষার তার কাকিমার কাছ থেকে মাছ দোকানির নম্বরটা নিয়ে ডায়েল করতে করতে নিজে নিজেই বিড়বিড় করে বলে উঠল, “উফ্ কাকিমাও না, বাংলা ইংরেজি একেবারে খিচুড়ি পাকিয়ে দিল।”
রিং হচ্ছে। মাছ দোকানি ফোন ধরলে তুষার যা বলার তা বলবে। বলা বলতে, আজকে তুষারের দাদার বিয়ে। অনেক কুটুম, বন্ধু, বান্ধবেরা বাড়িতে জমায়েত হয়েছে, দুপুরে তাদের খাওয়া দাওয়ার তো কিছু ব্যাবস্থা করতে হবে। সেই কারণ হেতু মাছের দোকানদার কে বলা ছিল বাড়িতে মাছ পৌছে দিতে। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে যাওয়ার পরেও মাছ দোকানির কোনো পাত্তাই নেই। বিয়েবাড়িতে সবাই যে যার কাজে ব্যাস্ত। তুষার ফাঁকা থাকতে পারে এই ভেবেই ওর কাকিমা তুষারকে মাছ দোকানির বিলম্বের কারণ এবং যাতে শীঘ্রই মাছ নিয়ে দোকানি বাড়িতে পৌঁছায় সে বিষয়ে তদারক করার ভার দিল।
রিং হচ্ছিল এমন সময় ওদিকে কলটা রিসিভ করতে তুষার তাড়াহুড়ো করে বলল, “আরে আপনি কোথায় ? কখন বলা হয়েছিল মাছ আনার কথা, আর আপনি এখনো পৌঁছালেন না।”
“Sorry.”
একি, এ তো একটা মেয়ে। তুষার ভাবলো এ নিশ্চই মাছ দোকানির বাড়ির কেউ হবে। তাই আগের মতো বলে চলল, “আচ্ছা মাছ নিয়ে কি বেরিয়ে পড়েছেন উনি, নাকি এখনো বেরোননি। একটু দেওয়া যাবে ফোনটা উনাকে, জিজ্ঞাসা করতাম মাছের ব্যাপারে।”
“কি তখন থেকে মাছ মাছ করে যাচ্ছেন। এটা কোনো মাছ দোকানির বাড়ি না।”
“মাছ দোকানির বাড়ি নয় মানে, এই নাম্বার টা তো দিলো কাকিমা আমাকে। সত্যি মাছ দোকানির বাড়ি নয় এটা।”
“একবার তো বললাম না, শোনা যায়নি নাকি। রং নাম্বারে ফোন করেছেন আপনি, রাখুন। যতসব।”
“কিন্তু…।” বলার আগেই টুক শব্দ করে ফোন কেটে গেল।
“যাঃ শালা ফোন কেটে দিল, অদ্ভুত তো। রং নাম্বার বলছে, কাকিমা কি তবে ভুল নাম্বার দিল। ফোন করে জিজ্ঞাসা করি আরেকবার কাকিমা কে।”
ফোন করবে ভেবেও ফোন আর করা হলো না তুষারের। কারণ, ঠিক সেই সময়ে মাছের দোকানি হাজির হয়ে গিয়েছিল।
“উফ্ বাঁচা গেল।”
বাড়িতে বিয়ে, তাই কাজের কোনো অভাব নেই। এটা আনো, সেটা আনো, এটা রাখো, ওটা রাখো করার ফাঁকে হঠাৎ তুষারের মনে পড়ে গেল একটু আগের ফোন কলটার কথা। মেয়েটা যখন ফোনে কথা বলছিল তার সঙ্গে একটা কাঁদো কাঁদো ভাব ছিল। তুষার তখন এতটাও খেয়াল করেনি ব্যাপারটা, এখন হঠাৎই ব্যাপারটা মনে পড়তে ও ভাবতে লাগল। মেয়েটা তখন কাঁদছিল কেন? একবার কি ফোন করে জিজ্ঞাসা করবে। না থাক, হঠাৎ যদি বলে বসে, নিজের চরকাতে তেল দিন তখন সেটা ভালো শোনাবে না। তাই তুষার নিজের কাজে মন দিল। কিন্তু খানিক পরেই আবার মনে হলো, একবার ফোন করে জিজ্ঞাসা করলে ক্ষতিটাই বা কি। ও তো আর সবার সামনে অসম্মান করেছে না। তাছাড়া যা কথা হবে সে তো দুজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, তাহলে আর সমস্যা কোথায় ? হ্যাঁ হ্যাঁ ফোন করা যেতেই পারে। কিন্তু তুষার তক্ষুনি ফোন করলো না, বিকেলে সূর্য ঢোললে নদীর পাড়ে নির্জনে বসে জিজ্ঞাসা করবে না হয়। এখন অনেক কাজ আছে, কাজে মন দিতে হবে।
সূর্য পশ্চিমের দিগন্তে একটু একটু করে গা এলিয়ে দিতে শুরু করেছে। এদিকে বাড়িতেও একটু একটু করে কুটুম বন্ধু বান্ধবদের ভিড় বাড়ছে। তুষারের ঠিক মনে আছে বিকেলের ফোন করার ব্যাপারটা। তাই বিকেল হতেই আর দেরি না করে কাছেই নদীর পাড়ে সবুজ ঘাস জমির উপর এসে বসল। এদিকটা নির্জন, তেমন বেশি কেউ আসে না। কিন্তু আজকে বাড়িতে বিয়ে হচ্ছে তাই যেকোনো সময় যে কেউ এসে পড়তে পারে। সে কারণে একটু সাবধানে দেখে শুনে কথা বলতে হবে। তুষার ডানদিকে আর একটু যেতে পারতো কিন্তু ওদিকে ধান জমি বেড়ে উঠে আল গুলোকে ঘাসে ঢেকে দিয়েছে। বিষধর সাপ খোপ যে একেবারেই থাকবে না সেটা একশো শতাংশ নিশ্চিত করে বলা যায় না। তাই সেদিকে তুষার গেল না। বামদিকে…, না বামদিকে তো যাওয়াই যাবে না, কারণ ওদিকে লোকজনের বসবাস রয়েছে। তাই তুষার এই জায়গাটাকেই পারফেক্ট মনে করল।
পকেট থেকে মোবাইলটা বের করল তুষার। নম্বরটা ডায়েল করে কানের কাছে নিয়ে এল। রিং হচ্ছে।
“হ্যালো।”
“হ্যাঁ হ্যালো, বলছিলাম…।”
“আপনি আবার ফোন করেছেন ? তখন বললাম রং নাম্বার,
...