ট্রেনটা
স্টেশনে থামতে অঙ্কিতা আর সোমা দুজনে ট্রেন থেকে নেমে পড়ল। ওরা দেখল ট্রেনের ভেতরে
যেমন ভিড় ছিল, প্ল্যাটফর্ম টা তে ও ঠিক তেমনি ভিড়। লোকজনেরা
বিশৃঙ্খল ভাবে ট্রেনে উঠছে কিংবা ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনের গেট দিয়ে অদৃশ্য হচ্ছে। যদিও
প্রত্যেক স্টেশনে প্যাসেঞ্জারের বিশৃঙ্খলতা হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার কিন্তু আজকে এই
বিশৃঙ্খলতার মাত্রা অন্যান্য দিন গুলো কে ও ছাড়িয়ে গিয়েছে। সেটার
কারণ যে শুধু মাত্র এবং কেবল মাত্র একটাই সেটা আর বলে দিতে হয় না। আর সেটা হল
বাঙালিদের সব চাইতে আড়ম্বর পূর্ণ এবং জাঁকজমক পূর্ণ উৎসব, দুর্গা পূজা।
দু-নম্বর
প্লাটফর্মে ট্রেনটা দাঁড়িয়ে ছিল। এক নম্বর প্লাটফর্ম সম্পূর্ন ফাঁকা। তাই কেউ
কেউ ফ্লাই ওভার দিয়ে এতটা ঘুর পথ ধরে না যাওয়ার অছিলায় দু নম্বর প্ল্যাটফর্মে না
নেমে উল্টো দিকে নেমে লাইন ক্রস করে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
ওরা
দুজনেও উল্টো দিকের লাইনটা তে নেমে পড়ল। অঙ্কিতা
প্রথমটা একটু গোঁ গোঁ করছিল কিন্তু পরে সোমার পীড়াপীড়িতে ওকে আসতে হলো।
ট্রেন
লাইনে নেমে তো পড়লো কিন্তু যখন এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাছে এসে দেখল, প্ল্যাটফর্ম
টা উচ্চতায় প্রায় তাদের এক কোমরের চেয়েও বেশি তখন কিভাবে উঠবে তা নিয়ে মাথা
ব্যাথা শুরু হলো।
ওদের
সঙ্গে আরও দুজন মহিলা এসেছিল এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে উঠবে বলে। মোটাসোটা
ভারী চেহারার দুজন মহিলা। খুব
কসরত করছে কিন্তু দেখে মনে হয় না উঠতে পারবে বলে।
সোমা
দেখলো, একটা ছেলে ট্রেন লাইন থেকে প্লাটফর্মে উঠে ওই দুজন মহিলার একজনের দিকে হাত
বাড়িয়ে দিয়েছে। ছেলেটা সিনেমার হিরোদের মতো দেখতে না হলেও মোটামুটি যথেষ্টই হ্যান্ডসাম। মুখে
একটা আলগা হাসি লেগে রয়েছে। হাতে ঘড়ি নেই, থাকলে হয়তো আরো ভালো লাগতো।
একে
একে দুজন মহিলাকে টেনে তুলল ছেলেটা। সোমা
অনেক চেষ্টা করেও উঠতে পারছে না দেখে নিজের ডান হাতটা বাড়িয়ে দিল ছেলেটার দিকে। ছেলেটা
হয়তো সোমার দিকে তাকিয়ে ভাবছিল টেনে তুলবে কি তুলবে না। হয়তো
এক সেকেন্ড দেরি করেছিল ভাবতে, ততক্ষনে অঙ্কিতা প্লাটফর্মে উঠে সোমার দিকে হাত
বাড়িয়ে দিয়েছে সোমাকে টেনে তোলবার জন্য।
সোমা
প্লাটফর্মে উঠে চারিদিকে চোখ চারিয়ে দেখল। কিন্তু কোথাও আর দেখতে পেল না ছেলেটাকে। সপ্তমীর
বিকেলে এমন একটা ঘটনা সোমার মনের ভেতরটাকে কিছুটা হলেও আন্দোলিত করলো।
সন্ধ্যায়
মেসের সাত জন মেয়ে সেজে গুজে বেরিয়ে পড়লো পুজো মন্ডপে। রাস্তায়
অগুনতি ছেলের মাথা খারাপ করে শেষমেশ মন্ডপে পৌঁছালো ওরা। তারপর ফুচকা দোকানির অর্ধেক
ফুচকা শেষ করে হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়া বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সেলফির
পর্ব ও চলতে থাকলো।
তারপর
একসময় সোমা বলল, “সবাই
মিলে একটা গ্রুপ ছবি তুললে কেমন হয়? কেউ একজন কে বল না তুলে দিতে।”
অঙ্কিতা
বলল, “সেলফি
তুললাম তো, আবার গ্রুপ ছবি কেন। আচ্ছা বেশ সবাই এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড় একটা গ্রুপ
সেলফি হয়ে যাক। আয় আয় সবাই চলে আয়।”
“উফ্,
আর
সেলফি নয়।” সোমা
ঈষৎ বিরক্ত হয়ে বলল।
অঙ্কিতা
ও খানিক বিরক্ত হয়ে বলল, “আরে
তোকে কে তুলে দেবে এখানে ছবি।”
ওদের
এই কান্ড কারখানা দেখে মোহিনী নামে এক বান্ধবী বলল,
“ওহ্ হো,
চুপ
কর। আমি দেখছি কেউ একজন কে বলে। তোরা একসঙ্গে লাইন করে দাঁড়া।”
একটা
ছেলে ওখানে দাঁড়িয়ে প্যান্ডেলের ছবি তুলছিল। মোহিনী
ওর কাছে গিয়ে বলল, “Hello, আমাদের
একটা গ্রুপ ছবি তুলে দিন তো। যদি
কোনো অসুবিধা না থাকে।”
“না
না, অসুবিধে কেন
হবে। দিন মোবাইলটা।” বলে
নির্দ্বিধায় রাজি হয়ে গেল ছেলেটা।
ছেলেটা
যখন সম্পূর্ন ভাবে ওদের ঘুরে দাঁড়ালো সোমার চোখ ততক্ষণে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এ
তো, আজ বিকালে প্লাটফর্মে দেখা সেই ছেলেটা। তখন হাতে ঘড়ি ছিল না কিন্তু এখন রয়েছে।
তখন পায়ে চিট লাগানো জুতো পরেছিল, এখন
সাদা রঙের বুট জুতো পরা। জামাটাও
মানিয়েছে খুব।
তিনটে
ছবি তুলে মোহিনীর হাতে মোবাইলটা দিয়ে ছেলেটা ভিড়ের মধ্যে কোথায় হারিয়ে গেল।
ছবি
গুলো কেমন হয়েছে দেখবে বলে সবাই ঝুঁকে পড়ল মোহিনীর হাতে ধরা মোবাইলটার দিকে। দেখল,
তিনটে ছবির মধ্যে দুটো ছবিই শুধু মাত্র সোমার।