চারটে-দশ
বাজে।
সমীরণ লম্বা স্টেশনটার তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের একটা বেঞ্চিতে, নিজের সামান্য জামাকাপড়
আর কিছু বই ভর্তি ব্যাগটাকে রেখে, প্ল্যাটফর্মের উপর চঞ্চল চিত্তে পায়চারি করছিলো। আজকে ও বাড়ী যাচ্ছে।
যদিও মাত্র দুদিন আগেই বাড়ী থেকে মেসে এসেছিলো, তবুও আজকে আবার বাড়ী যাওয়ার অবশ্য
একটা কারন রয়েছে।
কারণটা
আর কিছুই না, একজনের সঙ্গে দেখা করতে হবে। সে
আর কেউ নয়, ওর সঙ্গে একই স্কুলে একই সাথে পড়া একটি মেয়ে। যাকে অনেক কিছু বলারও
রয়েছে।
সমীরণ
তখন কলেজে প্র্যাকটিক্যাল করছিল। সেই
সময় ওর স্কুলের এক পুরনো বন্ধুর ফোন আসে। দু'একটা কথা বার্তা বলার পর সমীরণ বলে,
“শোন না বলছি, আর দুটো ক্লাস হওয়ার পর তো কলেজ
ছুটি হয়ে যাবে।
তো
এখন প্র্যাকটিক্যাল করছি মেসে গিয়ে না হয় তোর সঙ্গে জমিয়ে কথা বলা হবে। ফোনে কথা বলছি
দেখতে পেলে স্যার ভীষণ গালি দেবেন। রাখছি এখন, হ্যাঁ।”
সমীরণ
কলটা কাটতে যাবে অরিন্দম তাকে আটকে দিয়ে বলে,
“আরে শোন শোন, তুই মেসে গিয়ে ফোন করতে পারিস
বা বাড়িতে গিয়ে করিস সেটা তোর ব্যাপার। কিন্তু
যে কারণে ফোন করছিলাম সেটাই তো বলা হলো না।”
“কি কারণ তাড়াতাড়ি বল স্যার
আসছে এদিকে।”
“অনুপমা
তোদের কলেজের পাশের কলেজে…”
“দাঁড়া
দাঁড়া একটু হোল্ড কর।”
সমীরণ
চুপি চুপি প্র্যাকটিক্যাল রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। তারপর
বলে, “হ্যাঁ
কি বলছিলিস অনুপমা…”
অরিন্দম
হাসতে হাসতে বলে, “বাঃ
বাঃ অনুপমার কথা শুনে একেবারে প্রাকটিক্যাল বন্ধ করে-টরে
দিস নি তো আবার।
“আরে ধুর তুই বলতো কি বলছিলিস।”
“হুম্,
বলবো
বলেই তো ফোন করেছি।”
“তাহলে
বল।”
“তোদের
কলেজের পাশের কলেজে অনুপমা আর ওর কয়েকজন বান্ধবী সেমিনারে গিয়েছে। হয়তো বিকেলের
দিকে ফিরবে। এবার দেখ, যদি তুই দেখা করে বলতে পারিস। এতদিন
তো স্কুলে থাকতে ঠেলে-ঠুলে বলা করতে পারলাম না। সুযোগ
পেয়েছিস কাজে লাগাতে পারিস কিনা দেখ। কিন্তু
একটা কথা বলে রাখি তোকে, এবার যদি বলতে না পারিস তাহলে ভুলেই যা আর কোনো দিন বলতে
পারবি বলে।”
সমীরণ
কোনো কথা বলে না, চুপ
থাকে।
অরিন্দম
বলে, “কি
রে কি হলো, কথা বলছিস না যে।”
“হ্যাঁ
বলবো, আজকেই বলবো দেখেনিস।
“হ্যাঁ
বললেই ভালো। আর হ্যাঁ, ও
সম্ভবত আশাকরি ট্রেনেই যাবে। মেসে গিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়, দেরি করিস না। বেস্ট
অফ লাক।”
তারপর
সমীরণ প্রাকটিক্যাল ছেড়ে-ছুড়ে মেসে গিয়ে কিছু জামাকাপড় আর সামান্য দু'একটা
বই ব্যাগে ভরে নেয়।
এরপর
একটা টটোতে করে স্টেশনে পৌঁছায়।
চারটে
কুড়িতে ট্রেন ছাড়বে। আর মাত্র দশ মিনিট মতো বাকি কিন্তু অনুপমা তো এখনো এলো না। সমীরণ
অধৈর্য্য হয়ে পড়ে।
“তবে
কি অনুপমা ট্রেনে যাবে না, বাসে চলে গেল। তাহলে তো আর কিছু বলার সুযোগই পাবো না ওকে।
হায়, যদি
সেই সময় স্কুলে বলে দিতাম তাহলে আজকে এই দিনটা আর দেখতে হতো না।”
নিজের
মনে মনে এইসব কথা ভেবে আপসোস করতে থাকে সমীরণ। দীর্ঘ প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা লম্বা
ট্রেনটার একটা ফাঁকা কামরার উঠে জানালা ধারের সিটটাতে বসে পড়ে। তারপর হালকা
ব্যাগটাকে নিজের কোলের উপর রেখে স্টেশনে ঢোকবার গেটটার দিকে প্রত্যাশার দৃষ্টিতে তাকিয়ে
থাকে।
কত
লোকজন যাচ্ছে আসছে কিন্তু সে যাকে চাইছে তাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না।
হুইসেল
দিয়ে ট্রেন ছাড়ে।
প্রত্যেক
বার ট্রেন ছাড়ার পর যেরকম টা ঘটে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। যে
কয়জন ট্রেন মিস করেছে তারাই ট্রেনের পেছনে পেছনে দৌড়ে আসছে। সমীরণ
মুখ ফিরিয়ে এই সব দৃশ্য দেখছিল। প্রথমে
একটা ছেলে দৌড়াতে দৌড়াতে ট্রেনে উঠল, তারপর একটা মেয়ে ও একজন মহিলা একসঙ্গে, তারপর
আর একটা ছেলে দৌড়ে আসছে, তার ঠিক পেছন পেছন একটা মেয়ে, মুখ দেখা যাচ্ছে না
কিন্তু সমীরণের মনে হলো খুব চেনা কেউ। অনুপমা নয়তো আবার। সমীরণ তার চোখ দুটোকে নিচের
দিকে নামিয়ে মেয়েটার পায়ের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। জুতোর
কালো ফিতের নিচে ফর্সা পায়ের পাতা দেখে ও ঠিক চিনতে পেরেছে মেয়েটা অনুপমাই বটে।
স্কুলে
থাকতে যখন সমীরণ অনুপমার কাছাকাছি চলে আসতো কিংবা পাশ কাটিয়ে যেত, তখন সে অনুপমার
মুখের দিকে লজ্জায় তাকাতে পারতো না। সব সময়ে ওর পায়ের দিকেই নজর যেত। এই রকম হিসেব হীন
পদযুগলের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ কতবার যে ভিড়ের মধ্যে অনুপমাকে চিনিয়ে দিয়েছে তার
কোনো ঠিক নেই।
সমীরণ
তাড়াতাড়ি ব্যাগটাকে বসবার জায়গায় রেখে ট্রেনের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। একবার
হাত বাড়িয়ে পরক্ষনেই আবার হাতটাকে গুটিয়ে নেয়। ব্যাপারটা একটু বেশি
রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছে না তো।
সমীরণকে
হাত সরিয়ে নিতে দেখে অনুপমা হাঁফাতে হাঁফাতে বলে,
“হাতটা তো বেশ বাড়িয়ে ছিলে তুমি, ফট করে সরিয়ে
নিলে কেন? নাকি টেনে তুললে হাতে ফোস্কা পড়ে যাবে।”
অনুপমার
মুখে 'তুমি'
কথাটা শুনে সমীরণ প্রথমটা ভড়কে যায়। তারপর বলে,
“হ্যাঁ হ্যাঁ তুলছি তো।”
জীবনে
প্রথমবার কোন মেয়েকে স্পর্শ করছে। যাকে
ও সারাদিনে হাজারো বার স্বপ্নে দেখতো তাকে স্পর্শ করছে। কথাটা
ভেবেই যেন সমীরণের সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে গেল। ওর হাত দুটো যেন একটু কেঁপে উঠল।
“আরে
কি হল, টানো।”
“হ্যাঁ”
সমীরণ
কোনো রকমে অনুপমাকে টেনে তুলল।
অনুপমা
বলল, “উফ্,
আর
টুকু হলে মরেই যেতাম।”
“তাহলে
আমার কি হতো।”
“অ্যাঁ”
“না
কিছু না।”
হাতে
ধরে থাকা ব্যাগটাকে কাঁধের একদিকে ঝুলিয়ে, সামনের দিকে বসবার জায়গা খুঁজতে যেতে
যেতে অনুপমা সমীরণের উদ্দেশ্যে বলল, “কোথায়
বসেছো?”
নিজের
ব্যাগটার দিকে আঙুল দেখিয়ে সমীরণ বুঝিয়ে দেয় সে জানালা ধারে বসেছে। অনুপমা
গিয়ে বসে পড়ে, সমীরণ যেখানে তার ব্যাগটা রেখেছিল তার ঠিক সামনের সিটের জানালা
ধারে। তারপর ব্যাগটাকে কোলের উপর রেখে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ
করে।
সমীরণ
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অনুপমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর
নিঃশব্দে নিজের সিটে গিয়ে বসে পড়ে। মাথা নিচু করে মোবাইলটা বার
করে ঘাঁটতে থাকে। মাঝে
মধ্যে চোখ তুলে অনুপমার দিকে তাকায় আবার পরক্ষনেই চোখ নামিয়ে নিজের মোবাইলের
দিকে মনোযোগ দেয়।
ট্রেন
তার গতি বাড়িয়েছে।
বর্ষাকালের
দিন, সূর্যের দেখা নেই। চারদিকটা
পাতলা মেঘে আবছা হয়ে রয়েছে। তারই মাঝে কখনো গুঁড়িগুঁড়ি কখনো বা ভারী বৃষ্টি
লেগেই রয়েছে।
এই
মাত্র বৃষ্টি নামলো।
তবে
গুঁড়িগুঁড়ি নয়, ভারী বৃষ্টি। অনুপমা
জানালা ধার থেকে একটু সরে এলো। বৃষ্টির ছিটে জানালা ধারের সিটের কিছুটা অংশ
ভিজিয়ে দিয়েছে। সমীরণ
সেই আগের মতোই জানালা ধারে বসে রয়েছে। অনুপমা
সিটে জমে থাকা জলটা পরিস্কার করতে গিয়ে বেখেয়ালে জলের ছিটে গিয়ে পড়ে সমীরণের
উপর।
জলের
ছিটে পড়তে সমীরণ চমকে উঠে অনুপমার দিকে তাকায়,
“আরে আরে কি…”
কি
বলে সম্মোধন করবে।
তুমি,
আপনি, তুই কোনটা। তুমি টা বলতে সমীরণের কিরকম লাগছে। যেটা
ভয় বা লজ্জা কোনোটাই নয়। অনুপমা তো অনায়াসেই বলছে, সমীরণ যে কেন তুমি করে বলতে
পারছে না সে সেটা কোনো ভাবেই বুঝতে পারছে না। তুই। না,
এটা তো বলবেই না সমীরণ ওকে। আপনি টা বলা যেতেই পারতো কিন্তু সমীরণ একটু চালাকি
করেই কথাটা বললো যাতে সব দিকটা রক্ষা হয়।
“কি
হলো এটা।”
“Sorry!
ভুল
করে হয়ে গেছে।”
“হুম্”
বলে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে বসে সমীরণ। মোবাইলটাকে
একদিকে রেখে অনুপমার দিকে তাকিয়ে বলে, “তা
কোথায় যাওয়া হয়েছিলো ম্যাডামের?”
সমীরণ
সমস্তটা জানে, তবুও
আরও একবার জিজ্ঞাসা করে নিল। বৃষ্টি
কমে গেছে, অনুপমা পুনরায় তার নিজের যায়গায় গিয়ে মোবাইলটা ব্যাগ থেকে বার করতে করতে বলল,
“সেমিনারে এসেছিলাম।”
“ও,
তা
একা নাকি…”
“না,
আমরা
কয়েকজন বান্ধবী মিলে।”
“ও
আচ্ছা, তা বান্ধবীরা কোথায়?”
অনুপমা
একটু হেসে বলল, “কেন,
ওদেরকে বুঝি ভীষণ ইচ্ছে করছে দেখতে। নাকি
ওদের মধ্যে কাউকে ভালো লাগলে প্রপোজ করতে।”
সমীরণ
মনে মনে ভাবলো – ওদের
মধ্যে যাকে প্রপোজ করবো সে তো আমার সামনেই বসে রয়েছে।
তারপর সমীরণ হেসে বলল,
“আরে না না,
ওরকম কিছু নয়।
এমনিই
জিজ্ঞাসা করছিলাম।”
“ও
এমনি। কি জানি, কারুর মনের কথা এখন জানবো কি করে। যদি
না সে মুখ ফুটে কিছু বলে।”
কথাটা
শুনে সমীরণ একটু অবাক হলো। ইঙ্গিত টা কি তাকেই করলো নাকি অনুপমা। কে জানে, ঠিক
বোঝা যাচ্ছে না। নাও হতে পারে, কথাটা তো অন্য কারুর উদ্দেশ্যেও বলতে পারে। তবে
কি অনুপমা মনে মনে অন্য কাউকে ভালোবাসে। নাকি
ওর বয় ফ্রেন্ড রয়েছে আগে থেকেই। সমীরণ মনে মনে একটু নিরাশ হলো। একবার
কি জিজ্ঞাসা করে নেবে। যদি বয়ফ্রেন্ড থাকে তাহলে না হয় প্রপোজ করা থেকে দূরেই থাকবে
সে।
কী
বলবে সবকিছু ঠিক-ঠাক ভেবে নিয়ে সমীরণ অনুপমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলল,
“তা ম্যাডামের বয়…”
কথা
আর শেষ হয় না।
সমীরণের
মোবাইলটা বেজে উঠেছে।
অরিন্দম
ফোন করেছে।
কলটা
রিসিভ করে হ্যালো বলতে, অরিন্দম বলে, “কি
রে বললি?”
এসব
কথা অনুপমার সামনে বলা চলে না। তাই, “দু
মিনিট কথা বলে আসছি”- বলে
নিজের জায়গা থেকে উঠে সমীরণ ট্রেনের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়।
“বলিনি। কিন্তু
মনে হচ্ছে ওর কোনো বয়ফ্রেন্ড রয়েছে। এই অবস্থায় বলাটা ঠিক হবে কিনা সেটাই ভাবছি।”
“বয়ফ্রেন্ড?
তুই
কি পাগল হলি।
ওর
কোনো বয়ফ্রেন্ড-টয়ফ্রেন্ড নেই।”
”তুই
ঠিক জানিস ওর কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।”
“ওহ্
হো বললাম তো নেই। আচ্ছা তোর বলার ইচ্ছে আদেও আছে কিনা বলতো।”
“আরে
এই তো গিয়ে বলে দিচ্ছি দেখ না।”
সমীরণ
নিজের সিটে গিয়ে বসতে অনুপমা জিজ্ঞাসা করে,
“কি একটা বলছিলে তখন।”
“অ্যাঁ,
কই
না তো কিছু না।”
ট্রেনটা
একটা স্টেশন অতিক্রম করতে কামরার কিছু সংখ্যক সিট যাত্রী দ্বারা অধিকৃত হলো। কামরাতে
ভিড় এর পরের স্টেশনে নিশ্চই বাড়বে, তার
পরের স্টেশনে আরও বাড়বে, তারপর আরও। আর
তিনটে স্টেশনের পর ওদেরকে নামতে হবে। সমীরণ
ভাবলো, এর
পরের স্টেশন আসার আগেই বলে দিতে হবে কাথাটা ওকে। বেশি
ভিড়ের মধ্যে সমস্যা হতে পারে। কে
জানে, বলার পর যদি অপ্রত্যাশিত কিছু রিয়েক্ট করে বসে,
সেটা
ভিড়ের মাঝে সমীরণের জন্যে ভালো কিছু হবে না।
অনেকক্ষণ
থেকেই অদূরে আকাশের কোলে একটু একটু করে কালো মেঘ জমছিল। এখন
হঠাৎ করেই তা সারা আকাশ ছেয়ে চারদিকটা অন্ধকারে ভরিয়ে দিল। সেই
সঙ্গে ট্রেনের কামরাটাও অন্ধকারে ডুবে গেল। শুধুমাত্র দরজা আর কয়েকটা জানালা আলোকিত
হয়ে রইল।
অনুপমা
সেই আগের মতোই জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রয়েছে। ঠান্ডা মাতাল হাওয়া জানালা
দিয়ে ভেতরে ঢুকে তার চুল গুলোকে নিয়ে ইচ্ছে মতো খেলা করছে। মূখের উপর নেমে আসা
চুল গুলোকে অনুপমা বারবার আঙুল দিয়ে কানের উপর হয়ে পেছনে সরিয়ে রাখছে। কিন্তু,
পরক্ষনেই
আবার দমকা হাওয়া এসে চুলগুলোকে পুনরায় এলোমেলো করে দিচ্ছে। সমীরণ আড় চোখে এইসব
দেখছিল।
কালচে
হালকা বাদামি চুল গুলো সমীরণের ভীষণ প্রিয়,
সেই
কতকাল থেকে। এমন মুহুর্ত জীবনে কোনো দিনও আসেনি, হয়তো আর আসবেও না। এলোমেলো
চুলে ওকে বোধ হয় একটু বেশি সুন্দর লাগছে। একসময়
অনুপমা বিরক্ত হয়েই চুল গুলোকে বেঁধে নিল। সমীরণের
ভালো লাগলো না। মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, “আরে
বেঁধে নিলে…, এইরে।”
বলে
জিভ কাটলো সমীরণ।
“আর
বলো না, বার
বার মুখের উপর এসে পড়ছিল।”
অনুপমা
বুঝতে পেরে গেছে দেখে সমীরণ একটু লজ্জায় পড়ে গেল। মনে মনে বলল,
“তোমার চুল গুলো যে এতো সুন্দর তা আমি কল্পনাও
করিনি।”
কিন্তু
মুখে আর কিছু বলল না।
পরের
স্টেশন এসে গেল।
কামরায়
ভিড় আগের চেয়ে আরও বাড়লো। ওরা
দুজন মুখোমুখি যে লম্বা দুটো সিটে বসেছিল, তাতে আর মাত্র তিনটে জায়গা খালি রয়েছে।
সমীরণ
আরও অধৈর্য্য হয়ে পড়ে। কিভাবে
বলবে, কিভাবে
বলবে লোকজনের ভিড় বাড়ছে। এইবার বলে দেওয়া উচিত। পরে তো আরও ভিড় বাড়তে থাকবে।
ঘন
কালো মেঘ বিদীর্ণ করে বৃষ্টি নামলো। কিন্তু
সমীরণ কিছুই বলতে পারলো না অনুপমাকে। পরের স্টেশন ও চলে এলো। ট্রেনের কামরা পুরোপুরি
যাত্রীতে ভরে গেল।
আর
ন-মিনিট পর,
এর
পরের স্টেশনে ওদেরকে নামতে হবে। সমীরণ
হাঁটুর উপরে রাখা হাত দুটোকে মুঠো করে মাথায় বারবার ঠেকাতে লাগলো। তারপর বুকের
উপর হাত রাখতে টের পেল টেনশানে ওর হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে। হাত সরিয়ে অনুপমার
দিকে তাকালো।
অনুপমা
বাইরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সমীরণ একটা নিঃশ্বাস ফেলে শক্তি সঞ্চয় করে নিয়ে সভয়ে
বললো, “অনুপমা,
একটা
কথা বলার ছিল।”
অনুপমা
জানালা থেকে চোখ সরিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে কটা বেজেছে দেখল। তারপর সমীরণের দিকে
তাকিয়ে বলল, “হুম্
কি কথা।”
“কী
কথা, কী কথা, হ্যাঁ। কিন্তু কিভাবে বলবো সেটাই তো বুঝতে পারছি না।”
“মুখেই
বলবে, নয়তো আর কিভাবে বলবে।”
“হ্যাঁ
মুখেই তো বলতে…, আচ্ছা
কাগজে লিখে দিই।”
“কেন?
মুখ নেই নাকি বলার।
কাগজে
লিখে দিতে হবে।”
“না
মানে।” বলে
সমীরণ ঢোক গিললো।
সমীরণকে
ঢোক গিলতে দেখে অনুপমা হেসে বলল, “উফ্
সত্যি, ছেলে
দেখেছি অনেক বটে কিন্তু তোমার মতো কাউকে দেখিনি। এমন কী কথা যে মুখে বলতে পারছো না।”
সমীরণ
কিছু বললো না।
শুধু
কপালে বাম হাতটা ঠেকিয়ে আঙুলের ফাঁক দিয়ে অনুপমার দিকে তাকিয়ে রইল।
অনুপমা
বললো, “আচ্ছা
বেশ মুখে যখন বলবেই না তবে কাগজেই লিখে দাও।”
সমীরণ
তাড়াতাড়ি তার ব্যাগ থেকে একটা খাতা আর কলম বের করলো। খাতার একটা সাদা পাতার এক
কোণে কথাটা লিখলো সমীরণ। তারপর
লিখা সহ পাতার কোনটাকে টুকরো করে ছিঁড়ে নিয়ে সমীরণ যেই না কাগজটা অনুপমাকে দিতে যাবে
ঠিক তখনি এক দমকা বাতাস এসে উড়িয়ে নিয়ে গেল কাগজটাকে। কাগজটা উড়ে গিয়ে পড়লো উল্টো
দিকে বসা একটা মেয়ের কোলের ওপরে থাকা ব্যাগের উপর।
সমীরণ
ততক্ষনে মেয়েটার দিকে ফিরে তাকিয়েছে। মেয়েটা
কাগজের লেখাটার উপর একবার চোখ বুলিয়ে ব্যাগটাকে কোলের উপর থেকে সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
তারপর চোখ পাকিয়ে সমীরণের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। সমীরণের
বুক ধুকপুক শুরু হয়েছে। সঠিক
কী জবাব দেবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আর
সঠিক জবাব দিলেও যে বিশ্বাস করবে না সেটা সমীরণ ভালো ভাবেই জানে।
ঘটনার
সামাল দিতে অনুপমা উঠে পড়ে বললো, “Excuse me, আসলে
ওই কাগজটা আমার। ও আমাকে কাগজটা দিতে যাওয়ার সময় হাওয়ার কারনে তোমার কাছে উড়ে চলে
গেছে।”
মেয়েটি
কাগজটা অনুপমার হাতে দিয়ে বললো, “এসব
কাজ একটু সাবধানে করা ভালো নয় কি? এক্ষুনি থাপ্পড়টা খেতে খেতে বেঁচে গেল।”
সমীরণ
সঙ্গে সঙ্গে বাম হাতটা গালে ঠেকাল। ওর
মনে হলো যেন একটা অদৃশ্য থাপ্পড় এসে ওর গালে পাঁচটা আঙুলের দাগ বসিয়ে গেল।
অনুপমা “হুম্” বলতে মেয়েটা উল্টো মুখি হলো। অনুপমা নিজের যায়গায় বসতে বসতে কাগজটাতে একবার চোখ বোলালো। তারপর বসে পড়ে কাগজটাকে নিজের মুঠোর মধ্যে রেখে গম্ভীর ভাবে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকলো। অনুপমার এরূপ গম্ভীর ভাব দেখে সমীরণ আর কিছু বলার সাহস পেল না। চুপচাপ বসে রইলো।
মিনিট খানেক পর ওরা নিজেদের গন্তব্য স্টেশনে পৌঁছালো। ট্রেন থেকে যাত্রীরা নামতে তীব্র হুইসেল দিয়ে ট্রেনটা দূরে মিলিয়ে গেল।
স্টেশন
থেকে অটো স্ট্যান্ডে যাওয়ার মাঝের আধ মাইল মতো পথ হেঁটে যেতে হয়। ওরা হেঁটে অটো স্ট্যান্ডে
পৌঁছালো।
কিন্তু
মাঝে আসবার পথে একটা কথাও হলো না। এতে সমীরণ আরও ঘাবড়ে গেল। তবে
কি অনুপমা ভীষণ চটে আছে ওর ওপর। সমীরণ বুঝতে পারে না।
একটা
খালি অটোতে ওরা দুজন ওঠে বসে। অটোতে সম্পূর্ণ যাত্রী ভর্তি হলেই তবে অটো ছাড়া
হবে, তাই অটো-চালক যাত্রীর অপেক্ষায় বসে রয়েছে।
সমীরণ
মুখ বাড়িয়ে বাইরের দিকে তাকায়। সূর্য হীন আকাশটাতে কালো মেঘ বিচ্ছিন্ন ভাবে ছড়িয়ে
রয়েছে। সূর্য অস্ত গেছে
কিনা বোঝা যাচ্ছে না ঠিকই কিন্তু সময় বলে দিচ্ছে সূর্য অস্ত গিয়েছে। ঘন কালো মেঘ আর
তারই মাঝে মাঝে আচমকা দু-এক
ফোঁটা বৃষ্টি পথযাত্রীদের নাজেহাল করে তুলছে।
গ্রামের
দিকে বর্ষাকালের সন্ধ্যে গুলো কখন যে ঝপ করে নেমে আসে বোঝাই যায় না। আর হলোও ঠিক তাই।
ওদের অটো যখন ছাড়লো পশ্চিমের আকাশে তখন শুধু এক টুকরো আলো দীপ্ত হয়ে রয়েছে। চারিদিকে
অন্ধকার ততক্ষনে তার রাজ্য বিস্তারের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে।
বৃষ্টি
শুরু হয়েছে।
ভেজা
রাস্তার উপর দিয়ে মাঝারি গতিতে অটো ছুটে চলেছে। পর্দার
ফাঁক দিয়ে মাঝে মধ্যেই ক্ষিপ্র বজ্রের স্বল্প নীলাভ আলো চোখে পড়ছে। অটোর
ভেতরটা অন্ধকার। কারুর চোখ মুখ কিছুই দেখা যায় না। সমীরণ
অন্ধকারে অনুপমার দিকে তাকাল, শুধুই অন্ধকার। চোখ বুজে মনে মনে অনুপমার মুখখানা কল্পনা
করার চেষ্টা করলো। চোখ খুললে কি অনুপমার মুখটা দেখতে পাবে সে? সামনে যে অন্ধকার। সমীরণ
ধীরে ধীরে চোখ খুললো। কি আশ্চর্য্য সামনে অনুপমার মুখ স্বল্প আলোতেও স্পষ্ট। কিন্তু
আলো কোথা থেকে এলো! সমীরণ
দেখলো অনুপমার হাতে ধরা মোবাইলের স্ক্রিন থেকে আলোটা এসে ওর মুখে পড়েছে। ঝুঁকে পড়া
মুখটার দিকে সমীরণ ভালো করে তাকালো। দৃষ্টি গেল চোখ দুটোর দিকে। স্বল্প খয়রি মণির
চোখ দুটোতে যেন কোনো এক অদ্ভূত জাদু রয়েছে। যার থেকে হাজার চেষ্টা করলেও পালানো যায়
না। সমীরণ এক দৃষ্টিতে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইল যতক্ষণ না মোবাইলের স্ক্রীনের আলোটা
নিভে যায়।
একসময়
অটো এমন একটা জায়গায় এসে পৌঁছালো যেখানটায় সমীরণ আর অনুপমা ছাড়া বাকি সবাই
নেমে পড়লো।
ওরা
যেখানটায় নামবে সেখানে পৌঁছাতে আরও এক মাইল পথ বাকি। কিন্তু কি অদ্ভুত অনুপমাও
এখানে নেমে পড়লো। সমীরণকেও ইশারা নামতে বললো। অটো
চালক ওদের দুজনকে নামতে দেখে বললো, “আরে
তোমাদের তো পৌঁছাতে এখনও অনেকটা রাস্তা বাকি। এখানে নেমে পড়লে যে?”
অনুপমা
বললো, “না,
আসলে সবাই একসঙ্গে নেমে পড়লো তো তাই ভাবলাম আমরাও নেমে যাই। বাকি
এইটুকু রাস্তা আমরা হেঁটেই চলে যাবো।”
অটো
চালকের কারণটা ঠিক পছন্দ হলো না। অদ্ভূত
সন্দেহের দৃষ্টিতে ওদের দুজনের দিকে তাকালো। তারপর
- আচ্ছা ঠিক আছে,
বলে ভাড়া নিয়ে উল্টো মুখে অদৃশ্য হলো। সেই সঙ্গে ওরা দুজনেও হাঁটা দিল।
বৃষ্টি
স্নাত পিচের রাস্তার উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সমীরণ কেবলই ভাবতে লাগলো অনুপমাকে ট্রেনে
দেওয়া সেই কাগজটার কথা। কাগজে লেখা তিনটে শব্দের প্রত্যুত্তরের কথা। কিন্তূ সাহস
করে আর জিজ্ঞাসা করতে পারলো না।
শুক্লা
ত্রয়োদশীর সন্ধ্যে। কিন্তু আকাশে চাঁদের গতিবিধি দৃষ্টিগোচর হীন। মাঝে
সাজে এক টুকরো আলো মেঘের ফাঁক দিয়ে এসে ভেজা রাস্তা আর গাছপালা গুলোকে ঝলমলিয়ে
দিয়ে যায়।
হাঁটতে
হাঁটতে ওরা অনেকটা রাস্তা চলে এসেছিল। সেই কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই ওদের দুজনের
মধ্যে কোনো কথা হয়নি।
একসময়
অনুপমা সমীরণের সামনে এসে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়লো। তারপর
মুখ বাঁকিয়ে বললো, “আচ্ছা
তোমার কি ওই কাগজটা আর নেওয়ার ইচ্ছে নেই।”
“হ্যাঁ,
আছে তো নেওয়ার ইচ্ছে।”
“তবে
কিছু বলছো না কেন? আমি
সেই কতক্ষণ থেকে ভাবছি কখন তুমি কাগজটা চাইবে আর আমি ওটা তোমায় দেবো। কিন্তু সে,
একদম চুপ।
মনে
মনে ভাবছি চাও না হয়তো ওটা।”
“না
চাই তো।”
বলে
সমীরণ হাত বাড়িয়ে দিল।
“তবে
বলতে কি হয়েছিল, যতসব। হুম্।”
অনুপমা
কাগজটা সমীরণের হাতে গুঁজে দিয়ে এগোতে লাগলো।
সমীরণ
মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইটের আলোতে দেখলো কাগজে সে যা লিখেছিলো তার সঙ্গে তিনটে লেটারের
আরও একটা ওয়ার্ড যুক্ত হয়েছে, টি ডাবল ও। সমীরণ
আনন্দে লাফিয়ে উঠলো।
অনুপমার
সামনে গিয়ে হেসে বলল, “আমি
Just ভাবতে পারিনি
এরকমটা হবে। যখন থেকে তুমি গম্ভীর হয়েছে তখন থেকে ভয়ে ভয়ে ছিলাম। কখন তুমি
থাপ্পড় মেরে বসো এই ভয়ে আর কিছু বলিনি।”
অনেকটা
সময় পর সমীরণ অনুপমাকে তুমি বলে সম্বোধন করলো। সমীরণের
মনে হলো তুমি করে বলতে তাদের মধ্যে বন্ধনটা যেন আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেল।
অনুপমার
মুখে হাসির রেখা।
শুধু
বললো, “ধুর,
পাগল।”
এই
সময় সমীরণের মোবাইলে একটা নোটিফিকেশন এল। অনুপমা বললো,
“কিসের নোটিফিকেশন ওটা?”
অনুপমার
কথা বলার মধ্যে একটা অধিকারের ভাব জন্মে গেছে। সেটা হওয়া স্বাভাবিক। সমীরণ মোবাইলের দিকে
তাকিয়ে বললো, “মেইল
এসছে।”
“কিসের
মেইল?”
“দেখছি।”
মেইলটা
দেখে, “ও…হ্”
বলে খুশিতে কপালে হাত ঠেকালো। আনন্দে
ওর মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোলো না।
“কি
হলো কিসের মেইল?”
“একটা
চাকরির ইন্টাভিউ দিয়েছিলাম। ওখান থেকেই মেইল পাঠিয়েছে।
“তা
হলো চাকরি?”
“হ্যাঁ,
তারই কনফার্মেশন মেইল।”
“Wow,
Congratulation.”
“Thanks.”
ওরা
হাঁটছিলো।
অনুপমা হাঁটতে হাঁটতে আপসোস করে বলতে লাগলো,
“তুমি তো চাকরি পেয়ে গেলে। আমি যে কবে পাবো।”
“তোমার
চাকরি করার কি দরকার।
আমি
তো করছি।”
“না,
দরকার আছে। না হলে পরে তুমি খোঁটা দিয়ে বলবে তোমার কী যোগ্যতা রয়েছে। বিনা
কারণে আমার উপর চোটপাট করবে আর আমাকে সব সহ্য করতে হবে। আমি
ওসব পারবো না।”
“মোটেও
আমি ওরকম বলবো না কখনো। আর
চোটপাট করার কথা বলছো।
অকারণে
কাউকে কিছু বলি না, তোমায়
কেন বলতে যাবো।”
“হ্যাঁ
এখন নতুন নতুন প্রেমে পড়েছো কত প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলবে। পরে
সব ভুলে যাবে। সেই জন্যই আমি তো বলি প্রত্যেকটা মেয়েরই উচিত স্বাবলম্বী হওয়া। যাতে
পরে না কথা শুনতে হয়।”
“আচ্ছা
আমরা কি ঝগড়া করছি নাকি। এই দেখো কখন কখন ঝগড়া শুরু করে দিয়েছি বুঝতেই পারিনি।”
অনুপমা
একটু হাসলো তারপর রিংটোন বাজতে শুনে মোবাইলের দিকে নজর দিল।
সমীরণ
বললো, “বাড়ি
থেকে ফোন করছে নাকি?”
“না,
অরিন্দম ফোন করেছে।”
“অরিন্দম
হঠাৎ তোমাকে এখন ফোন করছে…।”
অনুপমা
প্রথমে একবার সমীরণের দিকে তাকালো। তারপর কলটা রিসিভ করে লাউস্পিকারে দিলো।
অরিন্দম
বললো, “কি
রে ওই ভীতু টা বলেছে কিছু।”
“কি
আমি ভীতু।”
অরিন্দম
হাসতে হাসতে বলল, “ও
তাহলে ভীতু টা বলে দিয়েছে।”
“আচ্ছা
তার মানে এটা তোদের দুজনের প্ল্যান ছিল।”
অনুপমা
একবার সমীরণের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, “হ্যাঁ
ভীতু টা অনেক কষ্টে বলেছে।”
“তাহলে
তো কাল রাতে পার্টি নাকি রে সমীরণ।”
“হ্যাঁ
বন্ধু চাকরি পেয়েছে পার্টি তো দেবেই।”
“চাকরি
পেয়েছে, তাহলে
তো সাতদিন পার্টি।”
“হ্যাঁ
আগে বাড়ি তো ফিরি।”
“হ্যাঁ
খুব মেঘ করেছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফির।” কথাটা
বলে অরিন্দম ফোনটা কেটে দিলো।
সঙ্গে
সঙ্গে মেঘ গর্জন আর বৃষ্টির বড়ো বড়ো ফোঁটার পতন শুরু হলো। অনুপমা
তাড়াতাড়ি করে ব্যাগ থেকে ছাতাটা বের করে মাথার ওপর তুলে ধরলো। সমীরণকে ভিজতে দেখে
অনুপমা সমীরণের জামাটা ধরে এক টান মারলো নিজের দিকে। তারপর অনুপমা সমীরণের হাতটা শক্ত
করে ধরে বললো,
“ছাতা
নিয়ে আসোনি।”
“আসলে
তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুলে গেছি।”
অনুপমা
মুচকি হেসে বললো, “হায়রে
প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করার চক্করে ছাতাটাই আনতে ভুলে গেছে।”
তারপর
বললো, “আচ্ছা,
কিসের
একটা সুগন্ধ বলো তো?”
“তোমার
পারফিউমের গন্ধ।”
“ধুর
পাগল, প্রেমে পড়ে মাথাটা গেছে একদম।”
কি
যেন একটা ভেবে নিয়ে সমীরণ বললো, “ও
হ্যাঁ এটা তো কদম ফুলের গন্ধ। এখন
তো বর্ষা কাল, কদম ফুলের সময়।”
“তাই
বলো।
গন্ধটা
খুবই মিষ্টি।”
“ঠিক
তোমার মতো।”
“আচ্ছা।”
বলে
মুখ টিপে হাসলো অনুপমা।
হাঁটতে
হাঁটতে ওরা একটা মোড়ের কাছে পৌঁছালো। যেখান থেকে বামদিকে কিছুটা রাস্তা গেলে
অনুপমার মাসীর বাড়ি।
কিন্তু
সমীরণকে যে সোজা আরও আধ মাইল রাস্তা যেতে হবে। সমীরণ
দাঁড়িয়ে পড়ে অনুপমার দিকে তাকিয়ে রইল। অনুপমা
বললো, “Whatsapp নম্বরটা
নাও আমার।”
“আছে
আমার কাছে।”
“ও
আগে থেকেই জোগাড় করে রেখেছো। আচ্ছা
বেশ hii পাঠাও।”
সমীরণ
তাই করলো। অনুপমা নিজের একটা ছবি সমিরানকে পাঠালো।
“একটা
মোটে।”
“হ্যাঁ,
আর কত দরকার। ওটাই রাখো।”
“আচ্ছা।”
“আর
তুমি নিশ্চই ভিজে ভিজে বাড়ি যাবে না। চলো
আমার মাসীর বাড়িতে…।”
“না
আমি থাকবো না তোমার মাসীর বাড়িতে।”
“ওহ্
হো তোমায় থাকতে কে বলছে। আমাকে
পৌঁছে দিয়ে ছাতাটা নিয়ে বাড়ি যেও।”
অনুপমা
তার মাসীর বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে সমীরণকে বললো,
“কাল মনে করে ছাতাটা দিয়ে যেও। আর
হ্যাঁ বাড়ি পৌঁছে একটা মেসেজ করে দিও।”
সমীরণ বাড়ির দিকে হাঁটা দিয়েছিল। মোবাইলে
মাত্র ৭% চার্জ। তবুও
সমীরণ অনুপমার ছবিটা বার করে দেখতে দেখতে ভেজা পথের উপর দিয়ে প্রচন্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে চলতে থাকলো।