Subscribe Us

header ads

Sorry Sir Series



সূচনা পর্ব

শীতের সকাল। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতেই সকালের মিঠে রোদ গায়ে লাগলো। দাদা সকাল নটা অব্দি ছাদে পড়াশোনা করে। আমার সকালবেলায় গুপী স্যারের কাছে অংক টিউশন থাকে তাই মাঝে মধ্যে ছাদে আসা হয়। আজকে সোমবার, তাই অফ ডে বলে ছাদে চলে এলাম। আমার থেকে বেশ খানিকটা পেছনে রয়েছে আমার বন্ধু নন্দরাজ ওরফে নন্দু। দুজনে পরিকল্পনা করে এসেছি দাদার কাছে একটা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবো। কী প্রস্তাবনা সেটা শীঘ্রই জানতে পারবে। কিন্তু প্রস্তাবনা দেওয়ার পর দাদা যদি পাশে পড়ে থাকা ইটটা নিয়ে তেড়ে আসে তখন চোঁ-চাঁ দৌড় লাগাতে হবে। সেই কারণে নন্দু আমার থেকে ব্যাবধান রেখে ছাদে উঠছিল এবং দরজার কাছ অব্দি এসে থেমে গেল। 

আমি দাদার কাছে গিয়ে একটু ভনিতা করে কথাটা বলা শুরু করবো, ঠিক সেই সময় দাদা বলল, “ফুলের চারা গুলোতে জল দিয়েছিস আজকে ?”

“না দিইনি দেবো। আসলে তোমাকে একটা কথা বলার ছিল তো...।”

“কি কথা ?” দাদা বইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকেই প্রশ্নটা করল।

“YouTube Video বানানো। তুমি Script লিখে দাও।” ভনিতা আর করা হলো না। সরাসরি বলা হয়ে গেছে। আর নন্দু এটায় অসন্তোষ প্রকাশ করে কপাল চাপড়াচ্ছে।

দাদা কিছুক্ষণ বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকার পর, গালে হাত বুলিয়ে সামনের এক চিলতে সাদা মেঘের দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবতে লাগলো। আমি মনে মনে ভাবলাম, এরপর বোধহয় হাতটা ইটের দিকে যাবে। নন্দু আমায় হাত নেড়ে ফিরে আসার জন্য ডাকছে। পালিয়ে যাওয়া উচিত ভেবে আমি সিঁড়ির দিকে ফিরেছি, সেই সময় দাদা বলল, “কিছু আইডিয়া রয়েছে নাকি তোদের কাছে ?”

আমি থমকে দাঁড়ালাম। নন্দু দাদার কথা শুনে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। উৎসাহের সহিত উত্তরে বললাম, “পারিবারিক কৌতুক ভিডিও করলে ভালই হয়। আমি, তুমি আর নন্দু তিনজনে।”

“আমি সবসময় থাকতেও না পারি। কিন্তু ভিডিওর জন্য স্ক্রিপ্ট লিখে দিতে পারি। কয়েকটা লিখা ছিল মনে হয় আমার ডায়েরিতে।” দাদা বলল।

“নিয়ে আসব এখুনি ?”

“নিয়ে আয়। দ্বিতীয় তাকটাতে রয়েছে। নীল রঙের মলাট করা বইটার নিচে।”

“সে আমি খুঁজে নিয়ে চলে আসব ঠিক।” আমি দৌড়ে দাদার রুমে চলে গেলাম। নন্দু আর দাদা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করতে থাকলো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ডায়েরি নিয়ে ছাদে হাজির হলাম। ততক্ষনে নন্দু কোথা থেকে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসেছে। আমি ডায়েরি নিয়ে দাদার কাছে নতুন মাদুরের উপর বসলাম। তারপর ডায়েরিটা দাদাকে দিতেই দাদা ডায়েরির একটা বিশেষ জায়গা বের করলো। ডায়েরির সেই পাতার উপর লেখা 'Sorry Sir'(Part-1).

পড়ে দেখলাম। ওটা আর কিছুই না, আমাদের অঙ্ক টিউশনের একটা কাল্পনিক ঘটনা। যেখানে চরিত্র হিসেবে রয়েছে আমাদের ক্লাসের ফার্স্ট বয় নারুগোপাল, আমি, নন্দু এবং আমাদের স্কুলের অংক স্যার।

নন্দু বলল, “অঞ্জনদা, Family Comedy নিয়ে কিছু ভাবনি ?”

“হ্যাঁ ভেবে তো রেখেছি কিন্তু লেখা হয়নি।”

“কিরকম কিরকম ?” আমি আর নন্দু দুজনে একসঙ্গে বলে উঠলাম।

“ওই তো My Uncle's Family. মানে কাকু, ছোটো মা, আমি, তুই আর নন্দুকেও রেখে দেবো চরিত্র হিসেবে।”

“আর তোমার ল্যাপটপে এডিটিংটাও করে নেবো।”

“ল্যাপটপটা খারাপ না হলেই হলো।”

“দাদা তোমাদের কলেজে Writting competition এর কী হলো ?”

“তৃতীয় হয়েছি। ১ম এবং ২য় হয়েছে আমার দুই বন্ধু। বিছানার উপর যে বইটা রাখা আছে ওটাই পুরস্কার।”

“দেখবো যাই তবে। ডায়েরিটা নিয়ে যাচ্ছি।”

“ডায়েরিটা রেখে যা। My Uncle's Family-র একটা স্ক্রিপ্ট লিখবো।”



Sorry Sir (Part-1)

গুপী স্যার : (চেয়ারে বসে টেবিলের উপর রাখা অঙ্ক বইটা দেখতে থাকেন)

নাড়ু গোপাল : (আগের দিনের কয়েকটা বাকি থাকা অঙ্ক কষে খাতাটা স্যারের দিকে বাড়িয়ে দেয়) স্যার বাকি অঙ্ক গুলো ছিল যে সেগুলো।

গুপী স্যার : (খাতা দেখতে দেখতে) সব গুলো করা আছে তো ?

নাড়ু গোপাল : (স্যারের দিকে তাকিয়ে) হ্যাঁ।

গুপী স্যার : (সব অঙ্ক গুলো দেখে নিয়ে টিক চিহ্ন দিয়ে খাতাটা নাড়ু গোপালের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে) ঠিক আছে এর পরের দাগ গুলো কর। 

(হঠাৎ এই সময় গুপী স্যারের মোবাইল বেজে ওঠে)

নাড়ু গোপাল : (স্যারের কাছ থেকে খাতাটা নেয় এবং ঠিক এই সময় কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ শোনে)

গুপী স্যার : (কলটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরে বার বার হ্যালো বলতে থাকেন) হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো…ও, আরে হ্যালো।

নাড়ু গোপাল : (একবার টেবিলের নিচটা দেখে নিয়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে বলে) স্যার আপনার মোবাইলের ব্যাটারিটা নিচে পড়ে গেছে।


Sorry Sir (Part-2)

অঞ্জন : (মোবাইল নম্বর ডায়েল করে)

স্যার : হ্যালো!

         এই যা! আগের দিনের মতো ব্যাটারি পড়ে গেল নাকি আবার।

নাড়ু : না স্যার ব্যাটারি নয় পেছনটা। (স্যারের দিকে তাকিয়ে) মানে ব্যাটারির পেছনটা।

স্যার : ও হ্যাঁ।

অঞ্জন : হ্যালো হ্যালো!

স্যার : হ্যাঁ,কে বলছেন?

অঞ্জন : স্যার আপনি এখনো আমার নম্বরটা সেভ করেননি?

স্যার : অঞ্জন!

অঞ্জন : হ্যাঁ

স্যার : আরে আজকেই সেভ করবো ভাবছিলাম।

          (অঞ্জন স্যারের কথা শুনে হেসে উঠে) হ্যাঁ তারপর বল।

অঞ্জন : আসলে স্যার আপনার তো টিউশন শুরু হয়ে গেছে।

স্যার : হ্যাঁ ওইতো নাড়ু আসছে কয়েক দিন হলো।

নাড়ু : (মনে মনে) পুরো নামটা বলতে ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। (মুখ ভেংচে)নাড়ু আসছে।

অঞ্জন : তাই আমার ভাইকে আপনার কাছে পাঠাবো ভাবছিলাম আরকি।

নাড়ু : অসীম আসবে। (মনে মনে ভাবতে থাকে)

স্যার : ও এই ব্যাপার। তা পাঠিয়ে দিবি এরপর দিন থেকে। তারপর তোর পড়াশোনার খবর কি?

অঞ্জন : ওই তো অনলাইন এক্সাম চলছে।

স্যার : (হেসে হেসে) ওই যে বই দেখে দেখে যেটা,ওইটা?

অঞ্জন : (হেসে উঠে) না স্যার বই দেখে লিখি না!

স্যার : হ্যাঁ জানি তো আমি,আর লজ্জা পেতে হবে না।

         আর হ্যাঁ প্রথম প্রথম কলেজ কারুর চক্করে পড়িস না।

অঞ্জন : কারুর চক্করে মানে।

স্যার : মানে উল্টো পাল্টা কারুর চক্করে পড়িস না।

অঞ্জন : উল্টো পাল্টা কারুর চক্করে মানে স্যার ঠিক বুঝলাম না!

নাড়ু : মেয়ের

স্যার : হ্যাঁ ওই মে… (নাড়ুর দিকে তাকায়)

অঞ্জন : স্যার এটা স্কুলে বললে পারতেন।

স্যার : আচ্ছা তুই এখন ফোন রাখ পরে কথা বলবো।

অঞ্জন : আচ্ছা স্যার।

নাড়ু : (মনে মনে) এই সুযোগে অসীমের উপরে স্যারকে তাঁতিয়ে দিতে পারলে না! উফ্! আমাকে মারা না!

স্যার : (মাথাটা একবার উপরে উঠান)

নাড়ু : স্যার ওই অসীম আর ওর বন্ধু বলে তাই…

স্যার : তাই

নাড়ু : Sorry Sir আর হবে না।

স্যার : তা এই অসীম টা কে?

নাড়ু : ওই যে একটু আগে যে ফোন করছিল তার ভাই। যাকে এর পর দিন থেকে টিউশন আসতে বললেন।

স্যার : হুম্ অঞ্জনের ভাই।

নাড়ু : উফ্ স্যার মনে হচ্ছে ওর উপর বেশ রেগে গেছে। কি আনন্দ হচ্ছে। আসুক এর পরদিন খাবে দু চারটা।

অঞ্জন : (Diary খুলে একটা ছবি বার করে দেখতে থাকে।)



Sorry Sir (Part-3)

অসীম : কি রে গান্ডু,স্যার কোথায়?

নাড়ু : তোকে কতবার বলেছি এসব আজেবাজে নাম ধরে ডাকতে না।

অসীম : ওহ্! OK! তবে Butter, Butter বলেই ডাকবো। (নাড়ুর দাদুর নাম মাখন। সেই জন্য স্কুলের সবাই তাকে Butter বলে ডাকে)

নাড়ু : আচ্ছা কেন বলতো সব কথায় আমার দাদুকে টেনে নিয়ে আসিস। আমার তো একটা নাম আছে নাকি।

অসীম : আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে নাড়ু,তুই এত রাগছিস কেন।

নাড়ু : নাড়ুগোপাল – নাড়ুগোপাল

অসীম : (মুখ টিপে উপর নিচে মাথা নাড়ায়)

স্যার : (স্যার ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা)

নাড়ু : স্যার কি হয়েছে আপনার? কোনো অ্যাকসিডেন্ট…

স্যার : আর বলিস কেন। কাল বিকালে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি…

অসীম : কেউ কি পেছনে দিয়ে দিল (সঙ্গে সঙ্গে স্যার তাকায়)। ধাক্কা, ধাক্কা দিয়ে দিল পেছনে।

স্যার : তাও হলে একটা ব্যাপার হতো।

নাড়ু :তবে?

স্যার : আরে বস বস।

অসীম : হ্যাঁ স্যার।

স্যার : কাল বিকালে একটা দরকারি কাজে বেরিয়েছিলাম। তো রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, হঠাৎ মার মার বলে…

অসীম : মাওবাদী তাড়া করে এলো।

স্যার : একটা ছেলে আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।

অসীম : ওহ্

স্যার : আর তার পরেই…

নাড়ু : তারপর, তারপর কি হলো স্যার?

অসীম : স্যার তো বলছে। চুপ থাক না।

স্যার : তার পরেই তো। উঃ কি ব্যাথা। উপর থেকে কি একটা উড়ে এসে ঠাঁই করে বাজলো মাথায়।

অসীম : কেউ কি স্যার ঢিল টিল কিছু ছুড়েছিল।

নাড়ু : স্যার তো বলছে। তুইও চুপ থাক না। (অসীম নাড়ু কে ভেঞ্চায়)

স্যার : না,তখন তো আমি প্রায় জ্ঞান হারিয়েই ফেলেছিলাম। পরে জানতে পারি ওটা নাকি একটা Power Bank ছিল।

(অসীম আগের দিনের কথা ভেবে চমকে উঠে। আগের দিন পাবজি গেম খেলবার সময় কেউ তার কথা নকল করার জন্য রেগে গিয়ে ছাদ থেকে power bank ছুঁড়ে মেরেছিল। সেটা গিয়ে একজনের মাথা ঘেঁসে বেরিয়ে যায়। এখন সে বুঝতে পারছে ওটা কার মাথায় লেগেছিল)

নাড়ু : Power Bank! কোনো ছাগল এরকম Power Bank ছুঁড়ে কাউকে মারে এই প্রথম শুনলাম।

অসীম : (নাড়ুর দিকে তাকায়)

নাড়ু : (অসীমের দিকে তাকিয়ে) তোর আবার কি হল। ওভাবে তাকিয়ে আছিস যে।

অসীম : না! কিছু না।

স্যার : কে মেরেছে একবার জানতে পারলে না!

অসীম : কি করবেন স্যার?

স্যার : মেরে ওর হাড় মাংস এক করে দেবো।

অসীম : স্যার তো ভীষণ রেগে আছেন দেখছি। (ঘাম মুছতে মুছতে)

নাড়ু : কি রে তুই এত ঘামছিস কেন?

অসীম : কই না তো। উঃ কি গরম। আজকে ভীষণ গরম।

নাড়ু : এটাতো গরম কাল নয়। (শীতকালের সকাল)

অসীম : তো গরমকাল নয় বলে গরম লাগতে নেই নাকি। তাহলে মনে হচ্ছে তুই টাইটানিক দেখিস নি।

নাড়ু : দেখেছি অনেকবার।

অসীম : ওহ্! তাহলে ওটা বাংলা ভার্সন ছিল।

নাড়ু : হ্যাট (বলে স্যারের দিকে তাকায়)। (তারপর বলে) আচ্ছা স্যার আপনি ঠিক কোন রাস্তা দিয়ে আসছিলেন বলুন তো।

অসীম : তোকে এতো গোয়েন্দাগিরি করতে কে বলছে।

নাড়ু : কেন? তোর এতো অসুবিধা কি হচ্ছে।

        (বলে স্যারের দিকে তাকায়) হ্যাঁ স্যার।

স্যার : (অসীমের দিকে তাকিয়ে) আরে ওইতো,ওদের বাড়ির সামনে দিয়েই আসছিলাম।

নাড়ু : আচ্ছা স্যার বন্ধুক বা ওই রকম কিছু শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন কি?

অসীম : ওইরকম মানে? Recently আমাদের পাড়াতে কেউ বিয়ে করেনি।

(বাইরে হঠাৎ মাইকে বেজে ওঠে, খেলা হবে)

স্যার : এই কে রে? এদের কি পড়াশোনা নেই। সারাদিন খেলাধুলা।

নাড়ু : স্যার বলুন।

অসীম : (নাড়ুর দিকে তাকায়)

স্যার : কিটা ?

নাড়ু : বন্দুকের শব্দ।

স্যার : ওহ্! হ্যাঁ বন্ধুকের একটা অস্পষ্ট শব্দ শুনেছিলাম বলে মনে হচ্ছে।

নাড়ু : এবার মনে হচ্ছে একটু একটু বুঝতে পারছি এটা কার কাজ হতে পারে। (কাথাটা বলতে বলতে অসীমের দিকে তাকায় নাড়ু)

স্যার : (নাড়ুর দিকে তাকিয়ে) কে কে একবার নামটা বল।

অসীম : (আড় চোখে তাকিয়ে নাড়ুকে মিনতি করে) বলিস না Please.

নাড়ু : হুম্,বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও…খেয়ে যাও…খেয়ে যাও ও সে যাই হোক। আমার কি ফায়দা?

স্যার : আরে কি বিড়বিড় করছিস নিজেদের মধ্যে?

অসীম : স্যার আপনার টাক কে ফাটি…(টাক কথাটা শুনে স্যারকে রেগে যেতে দেখে, টাকের বদলে মাথা শব্দটা ব্যবহার করে বাকি কথাটা শেষ করে) মাথায় কে মেরেছে ওইটা নিয়েই গবেষণা করছি।

স্যার : হ্যাঁ সে যাই কর! গরুটাকে খুঁজে পেলেই হলো। (অসীম স্যারের দিকে তাকায়)

অসীম : (স্যারের কথা শেষ না হওয়ার আগেই নাড়ুকে মিনতি করে বলে) আচ্ছা কি চাস বল। যেটা চাইবি দেবো। তুই Please বলিস না।

নাড়ু : Ok! আজকে স্কুলে দুপুরের পুরো টিফিন টা আমায় দিতে হবে।

অসীম : আরে তবে আমি কি খাবো?

নাড়ু : (স্যারের দিকে ঘুরে সব কিছু বলে দিতে যাবে এমন মুহূর্তে)

অসীম : আরে রাগছিস কেন? বাচ্চা ছেলে ভুল করে ফেলেছে। দেবো দেবো, তোকে পুরোটাই দেবো। (মনে মনে) কবে থেকে এরকম চার পেয়ে হয়ে গেছিস বুঝতে পারি নি।

নাড়ু : কিছু বললি নাকি?

অসীম : না কিছু না

নাড়ু : তবে ডিল ফাইনাল।

অসীম : হুম্ ফাইনাল! ফাইনাল।

স্যার : আরে কিসের কি ডিল? কি ফাইনাল? আর কে মেরেছিল বল?

নাড়ু : কে,কখন,কি! স্যার কিচ্ছু মনে পড়ছে না।

স্যার : তাই! কিচ্ছু মনে পড়ছে না ?

নাড়ু : না।

স্যার : আচ্ছা! তবে রে।

দুজনে : আরে পালা।

স্যার : (মাথার ব্যাথায় উঠতে গিয়েও উঠতে পারলো না) ভাগ্যিস মাথায় ব্যাথা, না হলে না!



Sorry Sir (Part-4)

(অসীম ও নাড়ুর মধ্যে কিছুক্ষণ ইশারা হয়)

নাড়ু : যদি কিছু বলে!

অসীম : আরে আজকে হোলি, কিচ্ছু বলবে না।

নাড়ু : বলছিস।

অসীম : দিয়ে দে। (মাথা নাড়িয়ে)

নাড়ু : (মাথা নাড়ায়)

(স্যার গুরুত্তপূর্ণ কিছু কাগজ দেখতে থাকে। সেই সময় নাড়ু হঠাৎ করেই হাতে আবির নিয়ে স্যারকে মাখিয়ে দেয়)

নাড়ু : Happy Holi স্যার।

(স্যার নাড়ুর দিকে কটমট করে তাকায়)

নাড়ু : (অসীমের দিকে তাকিয়ে) স্যার তো রেগে গেছেন দেখছি।

অসীম : (ভয়ে ভয়ে) হ্যাঁ তাইতো দেখছি।

নাড়ু : তুই যে বললি..।

অসীম : (কথা শেষ হওয়ার আগেই) একটা কাজ কর। তুইও রং মেখে নে,তাহলে স্যার আর কিছু বলবে না।

নাড়ু : হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। (নিজে নিজে আবির মেখে নিয়ে) Happy Holi স্যার।

স্যার : (নাড়ুর দিকে কটমট করে তাকায়) Happy Holi! (বলে কান ধরে)

অসীম : (হাসতে থাকে)

নাড়ু : স্যার লাগছে।

স্যার : লাগার জন্যেই তো ধরা। স্কুলের সব important document গুলোকে নষ্ট করে Happy Holi না তোর।

নাড়ু : স্যার…

স্যার : (কান ছেড়ে দিয়ে) তোরা তো চাস স্কুলের চাকরিটা আমার চলে যাক। তারপর আমি সারাদিন ধরে টিউশন করে বেড়াই।

অসীম : (হেসে) হ্যাঁ স্যার বেশ ভালোই হবে,সারাদিন টিউশন পড়বো।

স্যার : সরাদিন টিউশন পড়বি (অসীম হাসতে থাকে)। সব খবর রাখি (অসীম অবাক হয়)। লকডাউনে সারাদিন পঁড়ার মতো ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোতিস।

নাড়ু : (স্যারের দিকে তাকিয়ে ভাবে) আমাকেও বলবে নাকি। আমিও তো ঘুমাতাম।

অসীম : এই প্রথম শুনলাম, পঁড়া নাকি ভোঁস ভোঁস করে (স্যার অসীমের দিকে গম্ভীর ভাবে তাকাতে) ঘু…। ঘুমায় হ্যাঁ ঘুমায় তো…

স্যার : (কাগজ গুলো থেকে ফুঁ দিয়ে রং ওঠানোর চেষ্টা করে)

অসীম : আজকে টিউশনে দুটো ভুত দেখলাম।

স্যার : (কটমট করে অসীমের দিকে তাকায়)

অসীম : (নাড়ুর দিকে তাকিয়ে) একটা… একটা ভুত দেখলাম।

নাড়ু : হ্যাঁ তাইতো তুই কেন বাকি থাকিস। (বলে আবির মাখানো হাতটা অসীমের দিকে এগিয়ে দেয়)

অসীম : এই একদম দিবি না। না… না…! এই। (নাড়ু অসীমের গালে রং লাগিয়ে দেয়)

নাড়ু : এবার তিনটা ভুত হয়ে গেল। (বলে হেসে উঠে)

স্যার : স্যারকে ভুত বলা।

নাড়ু : (স্যার আবার নাড়ুর কান ধরে) স্যার লাগছে।

অসীম : (স্যার অসীমেরও কান ধরে) আমি আবার কি করলাম।

স্যার : (দুজনের কান একসঙ্গে ধরে) আর বলবি। কি হল বল।

নাড়ু : আ,না বলবো না, বলবো না।

অসীম : স্যার

স্যার : (জোর করে কান মোলে দেন)

নাড়ু : উঃ

অসীম : স্যার! স্যার ছাড়ুন একটা ভালো কথা বলবো।

নাড়ু : উফ্ (কান ছাড়তে দীর্ঘশ্বাস ফেলে)

স্যার : (স্যার মাথাটা একবার উপরে উঠান, কিছু জানার ভঙ্গিতে)

অসীম : স্যার আপনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম।

স্যার : কোথায়?

অসীম : কাল সন্ধ্যায় আপনার বাড়ির পেছনে চাঁচরে আগুন দিয়েছিলাম ওখানে।

স্যার : হ্যাঁ বাড়ির পেছনে কেন, আমার পেছনেই দিয়ে দিতিস।

নাড়ু : (মুচকি মুচকি হাসে)

অসীম : (হেসে) আচ্ছা স্যার এর পরের বছর থেকে (স্যার কটমট করে তাকায়) জ্বা লা বো না চাঁচর (খুব ধীরে ধীরে বলে কথাটা)।

স্যার : কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারছি না, যেখানে আগুন ধরানো হয়েছিলো সেখান থেকে ৫০-হাত দূরে আমার আমের চারাটা কেন শুকিয়ে গেল।

নাড়ু : (স্যারের দিকে তাকায়)

অসীম : (হাসে)

স্যার : (অসীমের দিকে তাকিয়ে) সব জানি প্যাঁক প্যাঁক করে আর হাসতে হবে না।

অসীম : (হাসি সামলে নেয়)

স্যার : আর কোথাও জায়গা নেই। টিউশন এসে বাইরে গিয়ে আমার ওই আম গাছটার উপরেই ছাড়তে হবে।

নাড়ু : (মুচকি হাসে)

অসীম : ( হাসি মুখে ছোটো বাইরে করার কথা ভাবতে থাকে)

স্যার : কত সুন্দর হয়েছিল আমের চারাটা।

নাড়ু : স্যার লিচু গাছের পাতা গুলো এখনো শুকোয়নি।

অসীম : (প্রথমে নাড়ু ও পরে স্যারের দিকে তাকায়)

স্যার : (নাড়ুর দিক থেকে ঘুরে অসীমের দিকে তাকায়) তার মানে লিচু গাছের চারাটাও। আমার প্রিয় লিচু গাছ…!

(স্যার গিয়ে দেখেন লিচু চারাটা শুকিয়ে গেছে)



Sorry Sir (Part-5)

স্যার : (হাতে ধরে থাকা পেনটাকে গালে ঠেকিয়ে কি যেন ভাবেন তারপর সামনের কাগজে লিখেন)

নাড়ু : (স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকে)

অসীম : (চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকার পর – নাড়ু কে শিস দিয়ে ইশারা করে জানতে চায় স্যার কি করছেন)

নাড়ু : নাটক!

অসীম : স্যার নাটক করছেন ? (স্যারের দিকে তাকিয়ে)

নাড়ু : আরে, নাটকে কে কে থাকবে তার list তৈরি করছেন।

অসীম : ও হো হো…, Sorry Sir, Sorry! (নাড়ুর দিকে তাকিয়ে) আগে তো বলবি নাকি!

স্যার : হুম্ OK! (কাগজের দিকে তাকিয়ে বলেন)

         (তারপর অসীমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করেন) হ্যাঁ, কি যেন একটা বলছিলিস তুই।

অসীম : (অবাক হওয়ার ভান করে) অ্যাঁ, না কই কিছু না তো।

স্যার : (কাগজটা হাতে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে) আচ্ছা, হ্যাঁ যেটা বলছিলাম। এবারে স্কুলের Annual function নে একটা নাটক করা হবে। তো…

অসীম : বাহ্ খুব ভালো হবে স্কুলের ছেলেমেয়েরা নাটক করবে আর…

স্যার : মেয়ে নয় শুধু ছেলেরা।

অসীম : ওহ্ ছেলেরা, শুধু ছেলেরা নাটক করবে। তো কি হয়েছে ছেলেরা করলো বা মেয়েরা করলো তাতে কি যায় আসে, নাটক তো। দেখবো।

স্যার : করবি।

অসীম : (মাথা কামড়াতে কামড়াতে) করবো? (অবাক হয়ে)

স্যার : হুম্। নাটকে কতজন থাকবে, কি নাটক হবে না হবে, সে সব পুরো দায়িত্ব আমার উপর রয়েছে। যে কজন নাটক করছে তাদের মধ্যে ৩জন থাকছে আমার টিউশন থেকে।

অসীম : মানে আমি নাটক করবো। না না স্যার আমি ওসবে নেই।

নাড়ু : (এক হাত তুলে) স্যার আমি আছি।

অসীম : (প্রথমে নাড়ুর দিকে তাকায় তারপর স্যারের দিকে তাকিয়ে বলে) কিন্তু স্যার তিন জন কোথায় দুজন তো।

নাড়ু : স্যারকে নিয়ে (অসীমের দিকে তাকিয়ে বলে)

অসীম : ওহ্ স্যারও থাকছেন। সে থাকুক আমি,আমি নেই।

স্যার : তোর নাম list-এ উঠে গেছে।

অসীম : না স্যার আমি থাকবো না।

স্যার : থাকতে বলেছি থাকবি। শুধু পড়াশোনা করলে হয় না,এসবেও অংশগ্রহণ করতে হয়।

অসীম : কিন্তু স্যার…!

স্যার : (নাড়ুর দিকে তাকিয়ে) এই লাঠিটা নিয়ে আয় তো।

অসীম : থা থা থা থাকবো থাকবো,থাকবো বলছি স্যার। প্রথম থেকেই বলছি থাকবো।

স্যার : হুম্! কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে এখনো নাটকের বিষয়টাই ঠিক করা হয়ে উঠেনি।

অসীম : (দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে স্যারের দিকে তাকায়)

নাড়ু : স্যার

স্যার : হুম্

নাড়ু : স্যার মহাভারত করলে কেমন হয়।

স্যার : মহাভারত? এতো বড়ো মহাভারত। আর… (অসীমের কথা শুনে তার দিকে তাকায়)

অসীম : স্যার ও মহাভারতের কোনো একটা ঘটনার কথা বলতে চাইছে।

নাড়ু : (উপর নিচে মাথা নাড়ায়)

স্যার : পুরো কথাটা বলতে কি হয়েছিল।

অসীম : (স্যারের দিকে তাকিয়ে) কি করবেন স্যার। (নাড়ুর দিকে তাকিয়ে) প্যান্টে ইয়ে করা লোক অর্ধেক কথা ভেতরে অর্ধেক কথা বাইরে তো হবেই।

নাড়ু : স্যার দেখুন কি সব বলছে। (প্রথমে অসীম তারপর স্যার পুনরায় আবার অসীমের দিকে তাকিয়ে কথা শেষ করে)

স্যার : এই! (ধমকের সুরে) আচ্ছা কোন ঘটনাটা করা যেতে পারে বলতো। (শান্ত সুরে)

অসীম : স্যার দ্রৌপদীর বস্ত্রহরনের ঘটনাটা করুন।

স্যার : তোর এই ঘটনাটাই মনে এলো।

অসীম : স্যার এটার জন্যই তো এতো বড়ো মহাভারত।

স্যার : কিন্তু কোনো মেয়ে তো থাকছে না তবে দ্রৌপদী কে সাজবে।

অসীম : স্যার আপনি Tention নিচ্ছেন কেন আমাদের নাড়ু তো রয়েছে, নাড়ু করে দেবে দ্রৌপদীর পাঠটা।

নাড়ু : (ধীরে ধীরে) আমি…! না স্যার...

অসীম : স্যার বলুন না।

স্যার : আচ্ছা ঠিক আছে ওটা না হয় নাড়ুই করবে।

নাড়ু : ঠিক আছে, স্যার যখন বলছেন। কিন্তু স্যার দুঃশাসন কে হবে?

অসীম : কেন রে? তোর কি ভয় করছে নাকি? (হেসে উঠে) আরে চাপ নিস না। ওটা না হয় স্যার হয়ে যাবেন।

স্যার : কি বললি ?

অসীম : স্যার আপনাকে কিন্তু দুঃশাসনের চরিত্রে বেশ মানাবে (স্যারের দিকে তাকিয়ে)। (তারপর নাড়ুর দিকে তাকিয়ে) কি বলছিস। (তারপর স্যারের দিকে তাকাতে,স্যার এক থাপ্পড় মারে)

অসীম : তবে থাক। অন্য কিছু নাটক করা যাবে না হয়।

স্যার : হুম্। কি নাটক ?

অসীম : রামায়ণ করুন স্যার।

স্যার : তুইও তো ওর মতো প্যান্টে…

নাড়ু : (প্রথমে স্যারের দিকে তাকায় তারপর অসীমের দিকে তাকিয়ে হাসে)

অসীম : (তাড়াতাড়ি স্যারের কথা আটকে বলে) রামায়ণের কোনো একটা ঘটনা।

স্যার : রাবণের সীতা হরণ।

অসীম : হ্যাঁ স্যার এটার জন্যই তো…

স্যার : …এতো বড়ো রামায়ণ।

অসীম : স্যার আমি তো এটাই বলতে যাচ্ছিলাম।

স্যার : (হেসে) আচ্ছা তারপর বল।

অসীম : আর, সীতার চরিত্রটা…

স্যার : নাড়ু করে দেবে।

নাড়ু : স্যার!

স্যার : (ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে নাড়ুকে চুপ করতে বলে)

অসীম : স্যার আপনি তো আমার মনের কথাটাই বলে দিলেন। কিন্তু কিভাবে স্যার…

স্যার : (হেসে) হুম্, এরপর বল।

অসীম : হ্যাঁ, আর রাবণের চরিত্রটা…

স্যার : ওটা তো স্যার করে দেবেন তাইতো, এটাই বলতে যাচ্ছিলিস।

অসীম : …না না স্যার। আ… আমি আমি কেন এরকম করে বলবো বলুন।

স্যার : না আমি জানতাম তুই এটাই বলতিস।

অসীম : না স্যার একদমই নয়। আমি… আমি তো ওই লিস্ট দেখে বলতে যাচ্ছিলাম। (বলে সামনে পড়ে থাকা কাগজটার দিকে আঙুল দেখায়। তারপর কাগজটা নিজের হাতে তুলে নেয়)

স্যার : আচ্ছা।

অসীম : আকাশ দে, সুমন মাইতি, অসীম জানা, গাড়ুগোপাল নায়েক, গুপী নাথ বাইন…

নাড়ু : (অসীমের দিকে তাকায়)

অসীম : স্যার আপনার নামের সঙ্গে না, পদবিটা ঠিক মানাচ্ছে না। পদাবিটা চেঞ্জ করে বাইন থেকে গাইন করে নিন। ফাটাফাটি হয়ে যাবে, গুপী নাথ গাইন। চেঞ্জ করে নিন স্যার, বাইন থেকে গাইনে। বাইন টু গাইন। বাইন টু গাইন। (স্যার কটমট করে তাকাতে অসীম নিজেকে সামলে নেয়)

স্যার : (স্যারের মোবাইলটা বেজে ওঠে। কলটা রিসিভ করে) হ্যাঁ স্যার বলুন।

হেড স্যার : হুম্ আপনার নাটক দলের কি খবর ? কি নাটক করা হবে কিছু ঠিক করেছেন।

স্যার : স্যার আপনার এই নিয়ে টেনশান করবার দরকার নেই। সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে। রাধা-কৃষ্ণের দোলযাত্রা করবো।

নাড়ু : রাধা-কৃষ্ণ

স্যার : …রাধার চরিত্রটা কে করছে সেটাও ঠিক করে নিয়েছি।

অসীম : রাধা রাধা (নাড়ুর দিকে আঙুল দেখিয়ে হাসতে থাকে অসীম)

নাড়ু : (মুখ গোমড়া করে অসীমের দিকে তাকায়)

হেড স্যার : কে করবে রাধার চরিত্র ?

স্যার : ওই তো আমাদের অসীম রয়েছে ও-ই করবে।

অসীম : (অবাক হয়ে চমকে স্যারের দিকে তাকায়) স্যার কি সব বলছেন, আমি রাধা হবো। স্যার স্যার নাড়ু তো রয়েছে। স্যার..

স্যার : চুপ (ইশারা করে চুপ করিয়ে দেয়)

হেড স্যার : আচ্ছা ঠিক আছে তবে আজ থেকেই রিয়ার্সাল শুরু করে দিন।

স্যার : Ok Sir.

অসীম : স্যার

স্যার : চুপ। Home-work বের কর। আর স্কুল ছুটির পর এদের সবাইকে একটা রুমে জড়ো করবি। (বলে টেবিলে রাখা কাগজটা অসীমের দিকে এগিয়ে দেয়)


• স্কুলে

স্যার : অসীম!

অসীম : হ্যাঁ স্যার

স্যার : রাধার স্ক্রিপ্ট নিয়ে যা।

সবাই : (সবাই একসঙ্গে হেসে উঠে)




Sorry Sir (Part-6)

অসীম : (দাঁড়িয়ে থেকে স্যারের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসে)

স্যার : (অল্প রেগে অসীমের দিকে তাকায় তারপর কাগজে কিছু লিখে নাড়ু কে দেয়)

নাড়ু : (স্যারের দেওয়া কাগজটা পড়ে অসীমের উদ্দেশ্যে বলে) খাড়ুস বাঁদরের মতো দাঁত না বের করে বস।

অসীম : (নাড়ুর দিকে রেগে তাকায়)

নাড়ু : (কাচুমাচু করে বলে) আমি বলিনি, স্যার বলেছে।

অসীম : (বসতে বসতে) কেন, স্যার কি মন ব্রত রেখেছেন নাকি? ওই যে ঘণ্টায় ঘণ্টায় মেয়েদের মতো রাগ অভিমানের মন ব্রত, ওরকম কিছু? (একটু হেসে) স্যার আবার কার উপর রেগে-টেগে আছেন ? (নাড়ুর দিকে জিজ্ঞাসার ভঙ্গিতে মাথা নাড়া দেয়)

নাড়ু : (মুখ বাঁকিয়ে বলে সে কিছু জানে না)

অসীম : স্যার ও স্যার …

নাড়ু : স্যার কথা বলবেন না।

অসীম : আব্বে চুপ বিনা পয়সার হুঁদুল কুতকুত Assistant.

অসীম : স্যার ও স্যার! স্যার স্যার স্যার …

স্যার : (কসিয়ে এক থাপ্পড় লাগায় অসীমকে)

নাড়ু : বলছিলাম না! স্যার কথা বলবেন না। স্যারের দাঁতে ব্যাথা। কাল দাঁত তুলে নিয়ে এসেছেন। সেই জন্য কথা বলছেন না।

অসীম : এটা তো আগেই বলতে পারতিস।

নাড়ু : (হেসে) আমি তো থাপ্পড়ের অপেক্ষায় ছিলাম।

স্যার : (একটা পেন অসীমের দিকে এগিয়ে দেয়) হুম্ম

অসীম : হ্যাঁ, থাপ্পড় মেরে সান্তনা পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।

স্যার : (দাঁতের ব্যাথার কষ্টে মুখে অদ্ভুত শব্দ করে ) দাঁতের ব্যাথার জন্য কথা বলবো না ভেবেছিলাম। কিন্তু এই ভেড়া গুলোর জন্য সেটা আর হলো না।

অসীম : (নাড়ুর দিকে তাকায়)

নাড়ু : তোকে বলেছে,আমাকে নয়।

অসীম : (অসীম নাড়ুর দিকে তাকিয়ে হাসে তারপর স্যারের দিকে তাকায়)

স্যার : কাল যে Test নিয়েছিলাম সেখানে ভালো লিখেছিস সেই জন্য এটা। ( বলে পেন টা অসীমকে দেয়)

অসীম : (অসীম পেন টা ধরে তারপর বলে) Thank You Sir.

নাড়ু : (ছট্ফট্ করতে থাকে কখন পেন টা দেবে)

স্যার : (নাড়ুকেও একটা পেন দেয়)

নাড়ু : Thank You Sir. Thank You Very Much Sir. Thank You So Much.

অসীম : (নাড়ুর দিকে তাকিয়ে) Thank You কাতলা মাছ। Thank You মাগুর মাছ। Thank You … (স্যারের দিকে তাকিয়ে সামলে নেয়)

অসীম : (হঠাৎ স্যারের আগুলের দিকে নজর যেতে) স্যার আপনার আঙ্গুলে কি লেগে ওটা।

স্যার : ও এটা! ভোট!

অসীম : (পুরো আঙ্গুল জুড়ে মোটা করে কালির দাগ দেখে) এইভাবে!

স্যার : হ্যাঁ আর বলিস না।

অসীম : আমি তো প্রথম ভেবেছিলাম নেলপালিশ আর মেহেন্দি দুটো একসঙ্গে লাগিয়ে দিয়েছে।

স্যার : (অসীমের দিকে গম্ভীর ভাবে তাকায়)

অসীম : (স্যারকে ওভাবে তাকাতে দেখে) না মানে যে ভাবে কালি টা দিয়েছে তাই বললাম আরকি।

স্যার : হ্যাঁ,আমায় তো এখানটায় এরকম দিয়েছে। আরো এক একজনের কোথায় কোথায় সব দিয়ে দিয়েছে।

অসীম : কেন স্যার ওরা প্যান্ট পরে যায়নি ? (বলে মুখ টিপে ভীষণ হাসতে থাকে)

স্যার : একজনকে দেখলাম এই আঙ্গুলটাতে দিলো। (বলে মাঝের আঙুল দেখায়)

অসীম : (নিজের তর্জনী স্যারের দিকে তুলে বলে) হ্যাঁ স্যার ওটার কথাই বলছি।

স্যার : (বিরক্তের ভঙ্গিতে ডান হাতের তর্জনী দিয়ে বাম হাতের অগুলের দিকে নির্দেশ করে দেখায়) আরে গাধা তার এই আঙ্গুলটাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল সেই জন্য অন্য আগুলটাতে দিয়েছিল।

অসীম : ও হো হো So… Sorry Sir Sorry Sorry.

স্যার : থাপ্পড় খাবি (বলে হাত দেখায়)

অসীম : Sorry Sir

স্যার : Home Work বের কর।

অসীম : হুম্ (অসীম খাতা বের করে পাতা উল্টায়। স্যার অসীমের দিকে তাকায়। খাতায় কিছু না দেখতে পেয়ে স্যারের দিকে তাকায়)

স্যার : কি হল করিসনি। (রেগে বলে)

অসীম : না স্যার খুজেঁ পাচ্ছি না।

স্যার : করা থাকলে তো তবে খুজেঁ পাবি।

নাড়ু : স্যার আমি করেছি,এই যে। (বলে স্যারের দিকে খাতাটা এগিয়ে দেয়)

অসীম : (নাড়ুর দিকে তাকায়)

স্যার : এর পরদিন তোর বাবাকে ডেকে নিয়ে আসবি।

অসীম : বাপিকে ? (কি যেন ভেবে নিয়ে বলে) বাপি, বাপির তো বাতের ব্যথা বাড়ি থেকে বেরায় না।

নাড়ু : আমি তো কালকে …

অসীম : (রেগে নাড়ুর দিকে তাকায়)

স্যার : ঠিক আছে তোর দাদাকে আসতে বলবি।

অসীম : দাদা ? (কি যেন ভেবে নিয়ে) দাদা,দাদার তো Online পরীক্ষা চলছে।

স্যার : সে তো একমাস আগে হচ্ছিল।

অসীম : এখনো হচ্ছে।

স্যার : ফোন করেই জিজ্ঞাসা করছি। (বলে ফোন বার করে ফোন লাগায়)

অসীম : (কল শুরু হয়ে গেছে এমন সময়) দাদার তো incoming বন্ধ।

স্যার : (Call হতেই,স্যার অসীমের দিকে তাকায়)

অসীম : (নিজেকে সামলে নেয়)

অঞ্জন : (রিং বাজতে মোবাইলটা তুলে কানে নেয়)

স্যার : Hello

অঞ্জন : হ্যাঁ স্যার বলুন।

স্যার : হুম্ বলছি তোর ভাই বাড়িতে আদেও পড়াশোনা করতে বসে ?

অসীম : (অসীম দু বার কাশে)

অঞ্জন : হ্যাঁ বসে তো।

স্যার : পড়তে (বলে অসীমের দিকে তাকায়)

অসীম : (একপলক স্যারের দিকে তাকায়)

অঞ্জন : হ্যাঁ পড়তে… পড়তে বসে।

স্যার : Game-টেম খেলে নাকি মোবাইলে।

অসীম : (অসীম তিন বার কাশে)

স্যার : (অসীমের দিকে তাকিয়ে) কানের কাছে খুক খুক না করে। কাশি হচ্ছে তো গিয়ে জল খেয়ে আয় না।

অসীম : না (একটু কেশে নিয়ে) শুকনো কাশি ঠিক হয়ে যাবে একটু পরে।

নাড়ু : হ্যাঁ কলটা কেটে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

অসীম : (রেগে নাড়ুর দিকে তাকায়)

অঞ্জন : না না কোনো Game-টেম খেলে না।

স্যার : আর…, কাউকে ফোন-টোন করে নাকি রে।

অসীম : (স্যারের দিকে আবাক হয়ে তাকায়)

স্যার : (বলে চুপি চুপি অঞ্জনের সঙ্গে কিছু কথা বলে)

অসীম : (কান বাড়িয়ে শুনতে যায়)

স্যার : (চুপি চুপি কথা বলার সময় অসীমের দিকে আড় চোখে তাকায়)

অসীম : (স্যার তাকাতে নিজেকে সামলে নেয়)


• বাড়িতে

অসীম : ওহ্ Thank You দাদ…

অঞ্জন : (কথা শেষ হওয়ার আগেই) পড়াশোনায় মন দে। এর পর থেকে মিথ্যে কথা গুলো আমি আর বলতে পারবো না।

অসীম : হুম্

অঞ্জন : আর কাকে ফোন করিস ?

অসীম : ফোন…, তোমাকে মা নিচে কিসের জন্য ডাকছিলো।

অঞ্জন : (অঞ্জন কিছুক্ষণ অসীমের দিকে তাকিয়ে থাকে)

অসীমের মা : অঞ্জু উ উ উ…

অসীম : (ছোটো মা যেদিক থেকে ডাকছিল সেদিকে আঙ্গুল দেখায়)

অঞ্জন : হ্যাঁ যাচ্ছি ছোটো মা।

অসীম : (অঞ্জন উঠতে যাচ্ছে এমন সময়) মোবাইলটা।

অঞ্জন : কি হবে।

অসীম : Game খেলবো।

অঞ্জন : Uninstall করে দিয়েছি।

অসীম : (কাঁদু কাঁদু হয়ে) কেন?

অঞ্জন : লুডো আছে ওইটা খেল। (বলে উঠে চলে যায়)

অসীম : লুডো কে খেলে।

অসীম : (অঞ্জন চলে যেতে) ফোন করি একবার। (নন্দুর কাছ থেকে ক্লাসের একটা মেয়ের বাড়ীর নম্বর নিয়েছিল)

অসীম : (কল করে ফোনটা কানে তুলে নেয়। রিং বাজতে থাকে। একটু পরে ওদিকে ফোনটা রিসিভ হয় কিন্তু কোনো কথা বলে না) হ্যালো হ্যালো… (ফোনটা কুঁক কুঁক করে কেটে যায়)




Sorry Sir (Part-7)

নাড়ু : স্যার (বলে নিজের খাতাটাকে স্যারের দিকে এগিয়ে দেয়)

স্যার : হুম্ (বলে খাটাতাকে নিজের দিকে টেনে নেন তারপর বলেন) আরেক জন কোথায়?

নাড়ু : জানি না স্যার

অসীম : (অসীম নিজের সাইকেলটা স্ট্যান্ড করে। প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে)

স্যার : তোদের দুজনের বাড়ি তো প্রায় কাছাকাছি।

নাড়ু : জানি না স্যার।

অসীম : (বৃষ্টির মধ্যে হাটতে হাটতে আসতে থাকে)

স্যার : বাড়ির সামনে দিয়ে আসবার সময় দেখিসনি ওকে।

নাড়ু : জানি না স্যার।

অসীম : (ভেজা ছাতাটা বারান্দায় রেখে সিড়ি দিয়ে উঠতে থাকে)

স্যার : বাড়িতে আছে নাক…

নাড়ু : (স্যারের কথা শেষ হওয়ার আগেই) জানি না স্যার।

স্যার : বুঝে গেছি আর বলতে হবে না। তুই কিছুই জানিস না, তাই তো।

নাড়ু : হ্যাঁ স্যার।

অসীম : স্যার আসবো।

স্যার : আরে আসুন আসুন। আপনার জন্যই তো অপেক্ষা করছি।

অসীম : (লজ্জা পেয়ে) স্যার কি যে বলেন না।

স্যার : এতো দেরি কিসের জন্য?

অসীম : দেরি? কোথায় দেরি স্যার, এই মাত্র ভোর হল।

স্যার : (স্যার তার নিজের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখে ০৮:১৭ বেজেছে) এক্ষুনি ভোর হল?

অসীম : (জানালার দিকে আঙ্গুল দেখায় বাইরে বৃষ্টি পড়ছে) দেখুন স্যার এখনো সূর্যও বেরোয়নি। তার মানে ভাবুন স্যার কত ভোর ভোর চলে এসেছি।

স্যার : দেখাচ্ছি সূর্য।

অসীম : স্যার আজকে আর কিছু বলতে পারবেন না। সব হোমওয়ার্ক করে নিয়ে এসছি।

স্যার : (নাড়ুর খাতাটা তার দিকে এগিয়ে দেয়)

নাড়ু : (স্যারের কাছ থেকে খাতাটা নেয়)

স্যার : (অসীমের দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে খাতাটা চায়। তারপর সব কিছু ঠিক-ঠাক আছে দেখে খাতাতে একটা অংক লিখে অসীমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে) এইটা কর।

অসীম : (নাড়ুর দিকে তাকিয়ে) ওই, এইটা কর।

নাড়ু : (অন্য দিকে তাকিয়েছিল। অসীমের কথা শুনে ফিরে তাকায়)

স্যার : ও নয় শুধু তুই করবি।

অসীম : Ok কোনো ব্যাপার নয়। পুরো বই complete হয়ে গেছে। এটা তো…। (অঙ্ক দেখার পর ঢোক গিলে স্যারের দিকে তাকায়)

স্যার : (হাসি মুখে তাকায়)

নাড়ু : (আড় চোখে খাতার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে)

অসীম : আব্বে দেখছিস কেন, হ্যাট।

স্যার : তাড়াতাড়ি করে দে।

অসীম : হ্যাঁ স্যার করছি।

(অনেক কাটাকুটির পরেও যখন হলো না)

নাড়ু : কি রে সোজা করে দিতে বলব।

অসীম : কোথাকার গোল গান্ডু সদাশিব এলো রো। এক বার করেই দেখ না। যদি না হাগা বেরিয়ে যায় তো বলবি আমায়।

নাড়ু : কই দেখি।

নাড়ু : (কিছুক্ষণ দেখার পর) এটা তো আমাদের নয়। এর পরের ইয়ারের।

অসীম : তাই ভাবি এত হাত লাগলাম তবুও সাইজে আসছে না কেন।

স্যার : কি রে হলো।

অসীম : স্যার এ…

স্যার : খাতা দেখি। (খাতা দেখে অসীমের দিকে তাকায়) এটা কি হয়েছে এরকম এরকম করে। (বলে হাত দিয়ে কাটা মতো দেখায়)

অসীম : তবে স্যার এরকম এরকম করে দেবো। (বলে আঙ্গুলটাকে উপর নীচ করে)

স্যার : চোপ, অংক পারেনি আরো কথা বলছে।

অসীম : কিন্তু স্যার এটা তো আমাদের নেই, এর পরের বছর রয়েছে।

স্যার : তো কি হয়েছে। পরের বছর তো করতেই হতো।

অসীম : স্যার…

স্যার : কোনো কথা নয়। অংক পারিসনি শাস্তি তো পেতেই হবে। দাঁড়িয়ে পড়।

অসীম : কিন্তু স্যার এটা তো চিটিং।

স্যার : দাঁড়াতে বলেছি না।

অসীম : (দাঁড়িয়ে পড়ে)

স্যার : হ্যাঁ এবার পেছনে ঘোর।

অসীম : পেছনে কেন?

স্যার : ঘুরতে বলছি, ঘুরবি।

অসীম : হুম্

নাড়ু : স্যার। (ফিস ফিস করে বলে)

স্যার : অ্যা (নাড়ুর দিকে তাকিয়ে বলে)

নাড়ু : স্যার ওর পেছনের পকেটে পেন রাখা আছে। আপনি মারলেও লাগবে না।

স্যার : হুম্। বের কর।

নাড়ু : হ্যাঁ স্যার

অসীম : (পেন বার করছে দেখে পেছন ফিরে তাকায়)

স্যার : (অসীমকে তাকাতে দেখে) কি ভেবেছিলি আমি কিছুই বুঝতে পারবো না। আরে আমি তোর স্যার হই রে স্যার।

স্যার : ঘোর পেছন। দেখাচ্ছি সূর্য তোকে এবার। (স্যার হাতে একটা মোটা লাঠি তুলে নেয়)

অসীম : (হাতে লাঠি তুলে নিতে দেখে) স্যার-স্যার-স্যার লাগবে স্যার। প্রচুর লাগবে স্যার। ভীষণ লাগবে।

স্যার : সোজা হয়ে চুপচাপ পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে থাক।

অসীম : স্যার…

স্যার : (স্যার লাঠি দিয়ে মারেন)




Sorry Sir (Part-8)

নাড়ু : (বসে বসে অঙ্ক করতে থাকে)

অসীম : (কিছুক্ষন এসে বসার পর গুন গুন করতে করতে গান শুরু করে) তোমার আমার প্রেম আমি আজও বুঝিনি।

নাড়ু : (গানের ফাঁকে নাড়ু অসীমের দিকে তাকায়)

স্যার : (অসীমের গানের ফাঁকে স্যার এসে বসে)

অসীম : এই চো....(স্যারকে দেখে) চোখের চোখের অক্ষিগোলকের তিনটি স্তর - স্ক্লেরা, কোরয়েড ও রেটিনা

স্যার : বাহ্ সামনে অঙ্ক খাতা খুলে রেখে biology পড়া হচ্ছে নাকি?

অসীম : হ্যাঁ স্যার ওই একটু আউড়ে নিচ্ছিলাম আরকি। স্কুলে আজকে পড়া না দিতে পারলে ভীষণ ক্যালাবে বলেছে, সেইজন্য।

স্যার : হুম্ ভালো ভালো। তা চোখের পর কী?

অসীম : চোখের পর। চো চো চোখের পর নাক। নাক।

স্যার : (কিছুক্ষন অসীমের দিকে তাকিয়ে থেকে) কি করছিলিস এতক্ষন।

নাড়ু : স্যার আপনার আসার আগে ও গা.. (অসীম কটমট করে তাকাতে সামলে নেয়)

অসীম : (কটমট করে নাড়ুর দিকে তাকায় তারপর স্যারের দিকে তাকিয়ে মিট মিট করে হাসতে থাকে)

স্যার : সব জানি আর দাঁত কেলাতে হবে না।

অসীম : (কাঁদো গলায়) Sorry Sir! (বলে স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকে)

স্যার : (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে) এক সময় আমিও রেওয়াজ করতাম।

অসীম : কি বলেন স্যার। লোকে শুনতো?

স্যার : (অসীমের দিকে চোখ তুলে তাকায়)

অসীম : মানে স্যার লোকে খুব শুনতো তাই না।

স্যার : হ্যাঁ সে অনেক কাল আগে। আমাদের বাড়িতে একটা কুকুর ছিল, শুনেছিস তো মনে হয়।

অসীম : হ্যাঁ

স্যার : ওটা মারা যাওয়ার পর আর গাই নি।

অসীম : স্যার, একটু শোনান না।

নাড়ু : (হাত নেড়ে অসীমকে না বলার ইশারা করে)

অসীম : (মুখে শব্দ করে নাড়ু কে থামিয়ে দেয়)

স্যার : শুনবি বলছিস।

অসীম : হ্যাঁ স্যার একটু হোক।

নাড়ু : স্যার এটা পারছি না। একটু দেখুন।

অসীম : এই থাম তো। ওসব পরে করবি।

স্যার : দেখি কোনটা হয়নি।

অসীম : স্যার বাদ দিন ছাড়ুন তো, মিথ্যে কথা বলছে। হয়ে গেছে ওর।

নাড়ু : (অসীমের দিকে ফিরে তাকায়)

অসীম : স্যার আপনি শুরু করুন।

স্যার : হ্যাঁ (গলা খাঁকরে নেয়। তারপর চোখ বুজে গান শুরু করেন)

নাড়ু : হয়ে গেল।

অসীম : (নাড়ুর দিকে তাকায়)

নাড়ু : (নাড়ু কাগজের গড়া পাকিয়ে তার কান দুটো বন্ধ করে দেয়। তারপর দুই আঙ্গুল দিয়ে নাক বন্ধ করে)

অসীম : (হেসে) কি রে পাগল-টাগল হয়ে গেলি নাকি।

নাড়ু : হ্যাঁ একটু পরে দেখবি তুইও পাগল হয়ে গেছিস।

স্যার : (continuously গান গেয়ে যান)

      সেদিন যখন বাজারে গেলাম – বাজারে গেলাম – বাজারে গেলাম – বাজারে গেলাম

অসীম : আরে ধুর এত সময় লাগছে কেন বাজারে যেতে।

নাড়ু : (স্যারের দিকে তাকায়, কানে একটু একটু শব্দ আসছে)

স্যার : বাজারে গেলাম – বাজারে গেলাম গো। পেঁয়াজের দাম প্রচুর ছিল, ছিল সস্তা আলু পটল। কিন্তু সস্তা ছিল না তেল ওয়ালা পেট্রল ডিজল গো পেট্রল ডিজল।

অসীম : (অল্প হেসে) নিশ্চই কোনো মহান ব্যক্তি গানের লিরিক্স টা লিখেছেন।

নাড়ু : আমি বরং এর চাইতে অনেক ভালো গান করতে পারি।

অসীম : (নাড়ুর দিকে তাকিয়ে মাথা হলিয়ে) হুম্, গা গা গা।

নাড়ু : (না বলার ভঙ্গি করে)

অসীম : হ্যাট, গা।

নাড়ু : (হ্যাঁ বলার ভঙ্গিতে মাথা হলায়)

অসীম : (হুম্ বলার ভঙ্গিতে মাথা উপর নিচ করে)

নাড়ু : মাঙ্গিতে মাঙে হিতে।

অসীম : (হাসিতে ফেটে পড়ে নাড়ুর দিকে তাকিয়ে বলে) এ নির্ঘাত হিরো আলমের ছোটো ভাই নাড়ু আলম।

স্যার : হঠাৎ আমি গেলাম ক্ষেপে... (স্যার এক খান জোর পাদ মারেন)

নাড়ু : (স্যারের দিকে তাকিয়ে) এই রে শুরু হয়ে গেছে।

অসীম : কি টা।

স্যার : গেলাম ক্ষেপে দিলাম বাইক টা কে বিক্রি করে।

নাড়ু : (নাকে গন্ধ আসতে) উঁহ

অসীম : (কানের কাছে হাত নেড়ে) উঁহ (তারপর নাক বন্ধ করে) এহে কি গন্ধ, ছিঃ।

স্যার : (গান stop করে)

অসীম : (অবাক হয়ে স্যারের দিকে তাকানোর পর নাড়ুর দিকে তাকায়) কি হলো।

নাড়ু : (অসীমের দিকে তাকিয়ে) নতুন গান শুরু হবে বোধ হয়।

অসীম : তার মানে আবার।

নাড়ু : (নাড়ু উপর নীচে মাথা নাড়ায়)

স্যার : গন্ধে গন্ধে ভরে উঠেছে চারিদিক।

অসীম : (মুখ বিকৃতি করে স্যারের দিকে তাকায়)

নাড়ু : আমি বাড়ি চললাম। তুই থাক গান শুন।

স্যার : তবুও মিষ্টি আজও গন্ধ গুলো। (স্যার আবারও পাদ মারেন)

অসীম : (নাড়ুর যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে) উঁহ, এই আমিও যাবো তোর সঙ্গে দাঁড়া।


• বাইরে এসে

অসীম : ওহ্ শান্তি।

নাড়ু : এবারে বুঝতে পারলি স্যারের বাড়ির কুকুরটা কেন মারা গিয়েছিল।

অসীম : একটু একটু বুঝতে পারছি কিন্তু পুরোটা না।

নাড়ু : আরে আমরা তো ছুটে পালিয়ে এলাম কিন্তু কুকুরটা সেদিন পালাতে পারেনি। চেন দিয়ে দিয়ে বাঁধা ছিল। আর সেই কারণে…

অসীম : অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছে তাই তো।

নাড়ু : এই তো কত সুন্দর বুঝে গেছিস।

অসীম : (হাসে)

নাড়ু : আসলে ওই গ্যাস টা তে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড এবং ..

অসীম : থাক অনেক হয়েছে তোকে আর পাদ নিয়ে গবেষণা করতে হবে না।

নাড়ু : (অবাক হয়ে আসিমের দিকে তাকায়)


• ওদিকে স্যার

স্যার : (গান গাওয়া বন্ধ করে) এই যাঃ এরা কোথায় গেল। ও বুঝেছি স্যারের গুণের কথা সবার কাছে বলতে গিয়েছে। ভালো ভালো। ছেলে গুলোর আক্কেল হয়েছে বলতে হয়।

কিন্তু কি একটা পচা গন্ধ, উঁহ। ছেলে গুলো গিয়েছে গিয়েছে তার সঙ্গে গ্যাস টাও ছেড়ে দিয়ে গেছে। বাড়িতে কি পচা পান্তা না কি কে জানে।

(একটু ভেবে নিয়ে) আচ্ছা আমিই তো কাল পান্তা খেয়েছিলাম। ও বুঝেছি তবে আমার চেম্বার থেকেই বেরিয়েছে গন্ধটা।




Sorry Sir (Part-9)

অসীম : (রাস্তায় আসবার সময় প্যান্ডেলের দিকে তাকাতে তাকাতে আসে)

স্যার : হ্যাঁ আসুক ও। (থেমে) আর homework দেখি।

নাড়ু : (স্যারকে খাতা দেবে বলে তৈরি করে)

অসীম : (এসে নিজের যায়গায় বসে)

নাড়ু : এই যে স্যার। (বলে নিজের খাতা স্যারের কাছে বাড়িয়ে দেয়)

অসীম : স্যার আজকে টিউশন করাটা কি খুবই দরকার ছিল। অষ্টমীর দিন কে পড়াশোনা করে বলুন।

স্যার : হ্যাঁ দরকার ছিল। না পড়ে পড়ে তো গাধা হয়ে যাচ্ছিস।

অসীম : (কানে হাত দেয়)

স্যার : কান ধরে নিজেকে আর গাধা বলে জাহির করতে হবে না।

নাড়ু : (অসীমের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠে)

স্যার : টিউশন না এসে কি করবি? প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরবি?

অসীম : স্যার আজকে অষ্টমী। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে কত ঠাকুর দেখতে হবে না।

স্যার : কেন, আগের দুদিন কি দেখিসনি নাকি? একই তো ঠাকুর কতবার দেখবি।

অসীম : আজকে স্যার নতুন নতুন ঠাকুর দেখবো। হি হি।

স্যার : (অবাক হয়ে) নতুন নতুন মানে।

অসীম : (নিজেকে সামলে নিয়ে) অ্যা, নতুন করে, মানে চশমা পরে দেখবো।

স্যার : (কটমট করে তাকায় অসীমের দিকে)

নাড়ু : (প্রথমে স্যার তারপর অসীমের দিকে দিকে তাকায়)

অসীম : আর স্যার ফুচকা দোকানের কাছেও দাঁড়াতে হবে।

স্যার : কেন ফুচকা দোকানের কাছে কেন দাঁড়াবি? ও বুঝেছি লোক খাবে আর তুই লোভ দিবি।

নাড়ু : (অসীমের দিকে তাকিয়ে হাসে)

অসীম : স্যার (মুখে অদ্ভূত একটা শব্দ করে) লোভ দিতে কেন যাবো। ওখানে দাঁড়াবো ফুচকা দোকানির সঙ্গে কথা বলবো, ও আমার বন্ধু হয়।

স্যার : কেন ও কি পড়াশোনা করে না।

অসীম : (হেসে) স্যার পড়াশোনা করে কতজন কে কি করেছে বলুন। সেই তো বেকার হয়ে ঘুরঘুর করতে হবে। তাই সে দেরি না করে আগে থেকেই কাজে লেগে পড়েছে। কি স্যার ও ভালো করেনি বলুন।

স্যার : (গম্ভীর মুখে) হ্যাঁ ভালো করেছে। কিন্তু তোর ব্যাপারটা আমার ঠিক হজম হচ্ছে না। আসলে কী করিস বলতো মন্ডপে গিয়ে।

নাড়ু : কি আর করে, পেছন পেছন ঘুর ঘুর করে।

অসীম : (স্যারের দিক থেকে নাড়ুর দিকে তারপর আবারও স্যারের দিকে তাকায়)

স্যার : (অবাক হয়ে) পেছন পেছন ঘুর ঘুর করে ?

নাড়ু : হ্যাঁ ও আর ওর একটা হারামী বন্ধু মিলে।

অসীম : (না কথা বলে) হারামী বন্ধু?

স্যার : কার পেছন পেছন।

অসীম : অ্যা, অ্যা আমি আমার বন্ধুর পেছন ঘুর ঘুর করি আর ও আমার পেছন পেছন ঘুর ঘুর করে।

স্যার : কেন দুজনে কি ওখানে মিউজিক্যাল চেয়ার খেলিস নাকি।

অসীম : না একসঙ্গেই তো যাই।

স্যার : তবে

নাড়ু : তৃতীয় কারুর পেছ…

অসীম : (নাড়ুর কথা শেষ হওয়ার আগে) আব্বে তেরি তো। (আস্তে আস্তে বলে)

নাড়ু : (নিজেকে সামলে নিয়ে স্যারের দিকে তাকায়) স্যার আমি তবে আসি এখন।

স্যার : হ্যাঁ আয়। আমিও একটু পরে বেরাবো।

নাড়ু : (উঠে চলে যায়)

অসীম : (নাড়ু কে উঠতে দেখে উঠে পড়ে)

স্যার : (অসীমকে উঠতে দেখে) তুই উঠে পড়ছিস কেন?

অসীম : (হেসে) স্যার আমিও তো যাবো।

স্যার : না তুই কোথাও যাবি না। চুপচাপ বসে থাক। কিছু প্রবলেম দিচ্ছি ওগুলো কর। …

অসীম : (কেঁদে) স্যার।

স্যার : …গিয়ে তো প্যান্ডেলে সেই ছাড়া ষাঁড়ের মতো ঘুরে বেড়াবি। সব বলেছে নাড়ু আমাকে। তুই নাকি…


(নাড়ুর বলা আগের কথা)

নাড়ু : প্রতিদিন। জানেন স্যার প্রতিদিন সেই বিকাল থেকে রাত অব্দি পূজো প্যান্ডেলে পড়ে থাকে। কি করে কি জানি। আজকে শুধু স্যার আপনার টিউশনটা আছে বলে যেতে পারেনি। না হলে এতক্ষনে প্যান্ডেলে। স্যার ও এলে ছাড়বেন না একদম দিলে টের পাবে। জানেন স্যার সবসময় ও আমার পেছনে লাগে।

স্যার : (নাড়ুর দিকে তাকিয়ে থাকে)

(আগের কথার শেষ)


অসীম : (মনে মনে) নাড়ু তোকে তো আমি পরে দেখে নেবো।

স্যার : কি বিড় বিড় করছিস মনে মনে।

অসীম : ( মুখে স্যারের দিকে তাকায়)

স্যার : (অসীমের দিকে খাতা এগিয়ে দিয়ে) এই গোটা পঞ্চাশেক problem দিলাম কর বসে বসে। আমি পূজো মন্ডপে যাচ্ছি, সন্ধ্যার দিকে ফিরে এসে দেখবো।

অসীম : (শুকনো মুখে) হুম্।

             স্যার একটু পরেই তো সন্ধ্যে নামবে, যাওয়ার সময় আলোটা (আলোর দিকে তাকিয়ে) জ্বেলে দিয়ে যাবেন।

স্যার : ও হ্যাঁ আসছি দাঁড়া।

অসীম : (খাতার প্রতি দৃষ্টি দেয়)

স্যার : (একটু পরে স্যার মোমবাতি আর একটা দেশলাই কাঠি নিয়ে এসে) এই নে এইটা জ্বালাবি।

অসীম : হ্যাঁ স্যার কারেন্ট চলে গেলে এইটা জ্বালাবো। আপনি আলোটা জ্বেলে দিন।

স্যার : আলো জ্বালানো হবে না। এটাই জ্বালাবি।

অসীম : অ্যাঁ, কেন স্যার ?

স্যার : কারেন্টর বিল টা তো আসবে নাকি। ওটাতো আমাকেই দিতে হবে।

অসীম : (প্রথমে অবাক হয়ে তাকায়, তারপর) ওহ্, কিন্তু স্যার একটা মোমবাতিতে তো হবে না।

স্যার : ওটা, যখন খাতায় লিখবি তখনই জ্বালাবি। আর যখন ভাববি তখন নিভিয়ে দিবি। (দেশলাই বাক্সের ভেতর দেখে একটা মাত্র দেশলাই)

স্যার : ওহো দেরি হয়ে গেল। (বলে চলে যান)

অসীম : (মুখ তুলে স্যারের দিকে তাকায়) কিন্তু স্যার একটা মাত্র দেশলাই কাঠি। যাঃ পালিয়ে গেল, ধুর।


• একটু একটু করে সন্ধ্যে নামল (সন্ধ্যে নামার দৃশ্য)

অসীম : (একমনে খাতার দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ কিসের একটা শব্দে চমক ভাঙ্গে। কিছু একটা ভেঙে পড়ার শব্দ। মোমবাতিটা নিজের মুখের সামনে নিয়ে আসে। হঠাৎ হালকা বাতাসে মোমবাতি নিভে যায়। একটা নিশ্বাসের শব্দ কানে আসে। তারপর ভুত ভুত বলে দৌড়ে পালায়)